নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুরের লিবিয়া প্রবাসী চার তরুণকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের দুজন, লিবিয়ার দুজনসহ মোট চারজনকে আটক করা হয়েছে।
মুক্তিপণের টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার আগেই তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার চার তরুণ বর্তমানে দেশটির পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। উদ্ধার হওয়ার পর চারজনের একজন পরিবারের কাছে ভিডিওবার্তাও পাঠিয়েছেন।
জানা যায়, জিম্মি তরুণদের পরিবারের কাছে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল জিম্মিকারীদের চক্রটি। লিবিয়ায় শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন কাজে কর্মরত ছিলেন চার তরুণ।
তাদের উদ্ধারের জন্য মুক্তিপণের টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছিল সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু এর আগেই তাদের উদ্ধারসহ জিম্মিকারীদের আটক করা হয়। মুক্ত হওয়ার খবরে এখন ওই চার তরুণের পরিবারসহ পুরো গ্রামে চলছে আনন্দের বন্যা, ফিরেছে স্বস্তি।
রোববার দুপুরে লিবিয়া প্রবাসী সোহান জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে পরিবারের কাছে ভিডিওবার্তা পাঠান। এর আগে স্থানীয় সময় স্থানীয় সময় সকাল ৯টার (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) দিকে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেন লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন রাতে বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। জিম্মির ঘটনার পর তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে তাদের উদ্ধার হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম। তার নির্দেশেই ওই তরুণদের পরিবারের কাছে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার খবর পৌঁছে দেন ওসি।
ওসি বলেন, উদ্ধার হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারগুলোর সঙ্গে থানা পুলিশের সদস্যরা দেখা করেন। এ ছাড়া জিম্মির ঘটনা জানার পরই পুলিশ সুপার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানান। সরকারের তৎপরতায় তাদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের মো. শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে মো. সোহান (২০), মো. তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪) এবং ইনামুল ইসলামের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়াতে কাজের জন্য যান। আর মৃত-শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) লিবিয়ান যান দুই মাস আগে। সচ্ছলতার আশায় জমি বন্ধক রেখে, গরু বিক্রি ও ঋণ করে তাদের বিদেশে পাঠিয়েছিল পরিবার।
গত ২ জুন লিবিয়া থেকে ওই চার প্রবাসীর পরিবারের ‘ইমো’ নম্বরে কল আসে। রিসিভ করতেই বলা হয় চারজনকে জিম্মি করা হয়েছে। যারা জিম্মি করেন, তারাও বাঙালি। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেওয়া হলে তাদের মেরে ফেলার কথা জানানো হয়।
এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা স্তব্ধ হয়ে যান। তারপর থেকেই ‘ইমো’ নম্বরে জিম্মি যুবকদের শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে বলেও জানান জিম্মিকারীরা।
মুক্ত হওয়া প্রবাসী বিদ্যুতের মা বিউটি বেগম জানান, তার স্বামী অনেক আগে থেকেই লিবিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পরে তার ছেলেসহ প্রতিবেশী আরও তিন তরুণ লিবিয়ায় যান। তাদের জিম্মির খবরে পরিবার ও স্বজনদের আহাজারি থামছিল না।
রোববার বেলা ১১টার সময় বিউটি বেগমের স্বামী তাকে কল করে জানান, তার ছেলেসহ চারজনকেই লিবিয়ার স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করেছে। রাতের মধ্যেই তারা তার কাছে ফিরবেন।
উদ্ধার সোহানের মা রুলি বেগম জানান, তার সন্তান মুক্ত হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। এতে তিনি আনন্দিত। গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সাগর শেখের মা জানান, তার স্বামীও মারা গেছে। একটি মাত্র সন্তানকে নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি। সেই ছেলেকে জিম্মি করা হয়েছিল। ছেলে উদ্ধার হওয়ায় তার মনে অনেক শান্তি।
জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাজিম আলীর স্ত্রী জানান, তিনি মনে করেছিলেন তার স্বামীকে হয়তো আর জীবিত পাবেন না। তিনি লিবিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
আরএইচ