ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

শিবচরে ৩ রাসেলস ভাইপার পিটিয়ে মেরেছে এলাকাবাসী, গ্রামে আতঙ্ক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
শিবচরে ৩ রাসেলস ভাইপার পিটিয়ে মেরেছে এলাকাবাসী, গ্রামে আতঙ্ক

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরের পৃথকস্থানে তিনটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয়রা।

শনিবার (২২ জুন) বেলা ১১টার দিকে দত্তপাড়া ইউনিয়নের হাজী কাইমুদ্দিন শিকদারকান্দি এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে একটি সাপ মারে এলাকাবাসী।

পরে দুপুরে শিরুয়াইল ইউনিয়নের উৎরাইল গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মসজিদের সামনে থেকে একটি এবং সন্ধ্যার পর একই এলাকার মো.জামাল শেখের বাড়ি থেকে আরও একটি সাপ পিটিয়ে মারা হয়। তিনটি সাপই রাসেলস ভাইপার বলে জানা গেছে।

এদিকে শিবচর ছাড়াও সদর ও কালকিনি উপজেলায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে। বিষাধর সাপটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। সবাইকে সতর্ক থাকতে জেলার বহু মানুষ তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের টাইমলাইনে রাসেলস ভাইপার সাপটির ছবি ও সর্তকবার্তা লিখে স্ট্যাটাসও দিচ্ছে। ফলে জেলাজুড়ে বিষধর সাপটিকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের হাজী কাইমুদ্দিন শিকদারেরকান্দী এলাকার কৃষক ফজলু মাল সকালে তার ধানক্ষেতে কাজে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে ফজলু তার জমি থেকে উঠতে গেলে ক্ষেতের আইলে একটি সাপ দেখতে পান। পরে তিনি আশেপাশের লোকজনকে ডাক দিলে সবাই গিয়ে বিষধর সাপটিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

এ ঘটনায় পরে ফজলুর ফসলি জমিসহ আশপাশের জমিতে সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই দল বেঁধে সাপ মারতে লাঠি নিয়ে জমিতে অভিযান চালাতেও দেখা গেছে।

রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে কৃষক ফজলু মাল বলেন, মানুষের উপস্থিতি টের পেলে যে কোনো সাপ সরে যায়। আর আজ দেখলাম এই বিষাধর সাপটি আক্রমণ করতে আসে। পরে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সাপটিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে।  

রিপন শিকদার নামের আরেকজন কৃষক বলেন, আমাদের গ্রামের এর আগেও এরকম সাপ অনেকেই দেখেছে। পাহাড়ি সাপ ভেবে বিষয়টি নিয়ে তেমন ভয় পাইনি কেউ। সাপটি লম্বায় কমপক্ষে পাঁচফুট হবে। ধারণা করা হচ্ছে, পাশের আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে সাপটি জমিতে ঢুকে পড়েছে। এই গ্রামে আরও এই ধরণের সাপ থাকতে পারে, তাই মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে উৎরাইল গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মো.রুবেল ফরাজী বলেন, শনিবার দুপুরে উৎরাইল মধ্যেরবাজার হাওলাদার বাড়ির মসজিদের সামনে থেকে একটি রাসেলস ভাইপার পিটিয়ে মারা হয়। এবং সন্ধ্যার দিকে পাশের একটি বাড়িতে বাড়ির গেট বন্ধ করতে গেলে রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পায় বাড়ির লোকজন। পরে পিটিয়ে মারা হয় সাপটিকে। আড়িয়াল খাঁ নদীতে পানি বেড়েছে। সম্ভবত নদী থেকে সাপটি উঠে এসে বাড়িতে প্রবেশ করেছিল। '

এরপর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে তিনি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলায় এখনও রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সাপটি শিবচরের পদ্মার চরাঞ্চল, আড়িয়াল খাঁ নদ সংলগ্ন সদর উপজেলার পাঁচখোলা, রাস্তি ও খোয়াজপুর ইউনিয়ন ও কালকিনি উপজেলার নতুন টরকিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়াও কয়েক মাস আগে শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদের লিটন চৌধুরী সেতু সংলগ্ন চর এবং চরের একটি বাড়ি থেকেও ২টি সাপ পিটিয়ে মেরেছিল এলাকাবাসী।

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক অখিল সরকার বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে বিষধর সাপের উপদ্রব বাড়ে। তবে কয়েক বছর ধরে রাসেলস ভাইপার নামের এই সাপটির বিচরণ এ এলাকায় শোনা যাচ্ছে। এটি সবচেয়ে বেশি ভয়ানক। কারণ এই সাপের কামড়ে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তাই সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে এই সাপ বা যে কোন বিষধর সাপে কাটলে ওঝা বা কবিরাজের কাছে না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে চলে আসুন। সাপে কাটার ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভেনম নিলেই আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। '

মাদারীপুর জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিবচরে রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে। পরে সেটি এলাকাবাসী পিটিয়ে মেরে ফেলে। সাপ বিষধর হলেও এটি বন্যপ্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কোন না কোনভাবেই এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই এটি নিধনের কোনো সুযোগ নেই। সবার সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে সাপে কাটা রোধ করতে। তা ছাড়া একটি গুজব রয়েছে, এই সাপ কাটলে তার নিশ্চিত মৃত্যু। এটি আসলে সঠিক কথা নয়। সাপটি বিষধর তাই কাটা স্থানে কাপড় বা দঁড়ি দিয়ে বেঁধে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা হয় এবং রোগী সুস্থ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।