ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

ভারত থেকে চোরাই ফোন এনে রাজধানীতে সরবরাহ করতেন তাহের 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৪
ভারত থেকে চোরাই ফোন এনে রাজধানীতে সরবরাহ করতেন তাহের 

ঢাকা: ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আনা হতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অবৈধ চোরাই অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ফিচার ফোন। চোরাইপথে আনা এসব মোবাইলফোন রাজধানীর বিভিন্ন মোবাইল বিক্রয়কারী মার্কেটে কম দামে বিক্রি ও সরবরাহ করে আসছিল চোরাচালানকারী একটি চক্র।

চক্রের মূলহোতা আবু তাহের (২৬) অবৈধ মোবাইলফোন রাজধানীতে পাচারের জন্য কুমিল্লা-ঢাকা রুটটি ব্যবহার করতেন। তবে সম্প্রতি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (২৯ জুন) রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চোরাই মোবাইলফোন উদ্ধারসহ চক্রের মূলহোতা আবু তাহের (২৬) ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৩।

মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের গ্রেপ্তার বাকি সদস্যরা হলেন- মো. মেহেদী হাসান (২২), মো. রুবেল হোসেন (২৯) ও মো. নূর নবী (৩২)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ৮০৮টি চোরাই মোবাইলফোন, দুটি প্রাইভেটকার, ও ৫ হাজার ৩৬৯ টাকা জব্দ করা হয়।

রোববার (৩০ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৩ এর লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবির।

লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবির বলেন, গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ মোবাইল ফোন বাংলাদেশে এনে তা কম দামে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের কাছে বিক্রয়কারী একটি চোরাকারবারির চক্রের সন্ধান পাই আমরা। এরপর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিদের বরাত দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে চোরাইপথে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় কারখানায় তৈরি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইলফোন আনতেন। এরপর চক্রের সহযোগীরা সেগুলো কুমিল্লা-ঢাকা রুট ব্যবহার করে রাজধানীতে নিয়ে আসতেন। মূলত সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বেশি লাভের আশায় গ্রাহকের কাছে কমদামে এসব মোবাইলফোন বিক্রি করতো চক্রটি।  

তিনি বলেন, ভারত থেকে ফোন চোরাকারবারি এই চক্রটির মূলহোতা হলেন গ্রেপ্তার আসামি আবু তাহের। তিনি গত তিন বছর আগে কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় একটি মোবাইল শো-রুমে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন। তখন থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে সংঘবদ্ধ মোবাইল চোরাকারবারী চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে মোবাইলের শো-রুমে চাকরির পাশাপাশি তাহের নিজেও এসব ভারতীয় ব্র্যান্ডের চোরাই মোবাইলের চালান আনিয়ে কুমিল্লাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে সরবরাহ করতে শুরু করেন।  

অল্প সময়ে বেশি অর্থ লাভের আশায় এবং তার এই অপরাধ কর্মকাণ্ডটি বিস্তৃত করতে তিনি নিজেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন। তার নেতৃত্বে চক্রটি কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত দেড়মাসে এ ধরনের পাঁচটি বড় চালান ঢাকায় সরবরাহ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তাহের।  

গ্রেপ্তার মেহেদী এই চক্রের মূলহোতা আবু তাহেরের অন্যতম সহযোগী। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণের বাসিন্দা। তার এক পরিচিত ভাইয়ের মাধ্যমে চোরাইপথে মোবাইল আমদানির চক্রে তাহেরের সঙ্গে জড়িয়েছে বলে জানা যায়। গত দেড় মাসে তিনি তাহেরের সঙ্গে মিলে পাঁচটি বড় চালান এনে ঢাকায় সরবরাহ করেছেন। তিনি দাবি করেন- ‘কুমিল্লা সদরের জনৈক সাজ্জাদ ওরফে শাকিলের বেতনভুক্ত কর্মচারী তিনি। ’ কিন্তু এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।  

লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবির আরও বলেন, তাহেরের অপর সহযোগী গ্রেপ্তার রুবেল পেশায় গাড়িচালক। প্রথমে তিনি রেন্ট-এ-কারে গাড়ি ভাড়ায় চালাতেন। তাহেরের চক্রে যোগ দেওয়ার পরে তাহের তাকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালাতে দেন। তিনি ওই প্রাইভেটকারটির চালানোর আড়ালে চোরাইপথে আসা মোবাইলগুলো তাহেরের নির্দেশে বিভিন্ন এলাকায় মজুত ও সরবরাহের কাজ করতেন।  

এছাড়া গ্রেপ্তার নূরনবী ফেনীর মহিপাল এলাকার জনৈক টিটু চৌধুরীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করেন। তাহেরের সঙ্গে পরিচয়ের পর অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের আশায় তিনি চোরাই মোবাইলফোন পরিবহনের কাজ শুরু করেন। পরে তাহেরের নির্দেশে তিনি বিভিন্ন সময় চোরাই মোবাইলফোনের চালান বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন।

লেফট্যানেন্ট কর্নেল বলেন, এ সব ফোনের আইএমইআই নম্বর বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) নথিভুক্ত না থাকায় অপরাধীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য চোরাইপথে আসা এ ধরনের মোবাইলফোন ব্যবহার করে থাকে।  

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা আরও জানিয়েছেন- চোরাইপথে আনা এ সব মোবাইল তারা রাজধানীর বিভিন্ন মোবাইল বিক্রয়কারী মার্কেটে সরবরাহ করতেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবির।

** কলকাতায় ছিনতাই হওয়া আইফোন এক বছর পর মিলল কেরানীগঞ্জে 

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৪
এসজেএ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।