ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কৃষিতে হারভেস্টিং লস ৩০ শতাংশ: মন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
কৃষিতে হারভেস্টিং লস ৩০ শতাংশ: মন্ত্রী

ঢাকা: আমাদের কৃষিতে হারভেস্টিং লস হয় প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এটা আমাদের অনেক বড় একটি ক্ষতি বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ।

 

তিনি বলেন, হারভেস্টিং লস কমাতে আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছেন। এখন হারভেস্টিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এ মেশিনের দাম অনেক। দাম কমালে কৃষকরা আরও বেশি করে কিনতে পারবেন।

রোববার (৭ জুলাই) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২১ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন৷ 

কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুল রহমান চৌধুরী।

প্রধান অতিথি  ড.মো. আব্দুস শহীদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন যে দেশে কৃষক বাঁচে না সেই দেশে আমাদের বাঁচার অধিকার নেই। কৃষি বিজ্ঞানীদের অনুরোধ জানাবো, আপনারা সব সময় কৃষকের পাশে থাকবেন। আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেক মেধাবী। তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে যারা সম্মাননা পেলেন তাদের অনুসরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খাদ্যর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজের খাদ্যে নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। এজন্য খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন না বাড়লে আমাদের বোকা হয়ে থাকতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষিতে হারভেস্টিং লস হয় প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এটা আমাদের অনেক বড় একটি ক্ষতি। এ ক্ষতি কমাতে আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করছে। এখন হারভেস্টিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। হারভেস্টং মেশিন কৃষি কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এ মেশিনের দাম অনেক। দাম কমালে কৃষকরা আরও বেশি করে কিনতে পারবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যেখানে যা করা প্রয়োজন সেটা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষকের কল্যাণে ও উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছেন। শুধু বাজেট বরাদ্দ নয়, ভর্তুকিও দিচ্ছেন। ৫৪ টাকার সার কৃষকদের দিচ্ছেন মাত্র ২২ থেকে ২৩ টাকায়। সার আমদানিতে অগ্রিম বুকিং দেওয়া থাকে। সার আমদানিতে টাকা বরাদ্দের জন্য আমরা বসে থাকি না। কারণ সার না পেলে কৃষকরা আটকা পড়বে৷ এরফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। বাংলাদেশ একটি বৈচিত্রময় দেশ কিন্তু সবারক্ষেত্র একটাই সেটা হলো কৃষিক্ষেত্র।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখা যাবে না প্রধানমন্ত্রীর এ স্লোগান বাস্তবায়ন করছেন দেশের কৃষকরা। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী একজন কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছেন, সার, বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের আরও ভালো করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সিলেটে কৃষি ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ করা গড়ে সিলেটের এক ইঞ্চি জমিও খালি থাকবে না।

রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এ সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। জৈব সারে উৎপাদিত পণ্য রাসায়নিক সারে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়। এজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে তারা কৃষকদের নিয়ে এ জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে দুজন বক্তব্য প্রধান করেন। এরমধ্যে বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, যে কোনো সম্মান মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। মানুষকে সাহস জোগায়। বাংলাদেশে যে জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হওয়া কথা ছিলো তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন, এরসঙ্গে জড়িতদের উৎসাহিত করতে নানা ব্যবস্থা করছেন।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কৃষি, ফসল নিয়ে তার জ্ঞান দেখের আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। যে কারণে কৃষি নিয়ে কথা বলতে গেলে হিসেব করে বলতে হয়। যে কারণে তিনি সব সময় কৃষিকে ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন৷ এআইপি দেওয়া হয় একবছরের জন্য এরপর আর সে কোনো সুযোগ সুবিধা পাবে না। এরপর তার নামের পেছনে এআইপি যুক্ত করতে পারবে কিনা সে বিষয়টি একটু ভেবে দেখার অনুরোধ করেন তিনি।

ফরিদপুরের খান বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহিদা বেগম বলেন, ২০০৪ সালে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করি। কৃষি এখন অনেক সমৃদ্ধির জায়গা। আমরা যে কাজ করছি সেই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এ সম্মাননা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষি খাতে সারে ভর্তুকি দিচ্ছেন। আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যাংকের লোনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্তু লোন পাইনি। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করে আমরা আরও ভালো করতে পারবো।  


এরআগে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে এআইপি সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয় ২২ জনকে। এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট ৫টি বিভাগে এ প্রদান করা হয়। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে ১ বৎসর। এরই মধ্যে নির্বাচিত ব্যক্তিদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।

সিআইপিদের মতো সুযোগসুবিধা পাবেন এআইপিরা। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাশ, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
জিসিজি/জেএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।