ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে প্রতিমার কাপড়ে আগুন দেওয়ার অভিযোগ এনে দুই সহোদরকে (নির্মাণ শ্রমিক) পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও ওই ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) অজিত কুমার বিশ্বাসকে অপসারণ করে তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারের পদ শূন্য ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনিক।
এর আগে রোববার (৭ জুলাই) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ থেকে জারি করা জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার এর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও ওই ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) অজিত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে গত ১৮ এপ্রিল দুজন নির্মাণশ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারা অনুযায়ী ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, নির্মাণ শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় তাদের (চেয়ারম্যান-মেম্বার) দিয়ে ইউপির ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। এ কারণে তারা স্থানীয় সরকার আইনের ৩৪ (৪) (খ) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় একই আইনের ৩৪ (৫) ধারা অনুযায়ী তাদের স্বীয় পদ হতে অপসারণ করা হয়েছে। একই আইনের ৩৫ (১) (২) ধারা অনুযায়ী মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।
সেই প্রজ্ঞাপনের আলোকে সোমবার (৮ জুলাই) স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ৩৫(১) ধারার (খ) এবং ৩৫(২) উপ-ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের পদ শূন্য ঘোষণা করেন মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন আহমেদ অনিক।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালী মন্দিরের প্রতিমার শাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী মন্দির-সংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজে জড়িত শ্রমিকদের সন্দেহ করেন। পরে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে চার নির্মাণ শ্রমিককে মারধর করা হয়। রাতেই দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহত দুই শ্রমিক মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট এলাকার শাহজাহান খানের বড় ছেলে আশরাফুল খান (১৯) ও মেজো ছেলে এরশাদুল খান (১৫)।
এ ঘটনার দুইদিন পর ১৫ ও ৪৩ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও ক্লিপ গত ২১ এপ্রিল সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে শ্রমিকদের মারধরে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অজিত বিশ্বাসকে অংশ নিতে দেখা যায়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য গা ঢাকা দেন। গত ২৬ এপ্রিল রাতে এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। পঞ্চপল্লীর ঘটনায় হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। এসব মামলায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সোমবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২৪
আরআইএস