ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস

গ্রামে ‘ভালো’ মানুষ আবেদ আলী, হতে চেয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যানও 

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৪
গ্রামে ‘ভালো’ মানুষ আবেদ আলী, হতে চেয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যানও  জীবন ও তার ছেলে সিয়াম, ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

মাদারীপুর: পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের তালিকায় থাকা মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার সৈয়দ আবেদ আলী জীবন এলাকায় ‘ভালো’ মানুষ বলে পরিচিত।  

তিনি ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচার প্রচারণায়ও নেমেছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। প্রথমে সেখানেই কুলির কাজ করতেন। এক সময় ফুটপাতে ঘুমিয়ে কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপরই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ। সঙ্গে ক্ষমতাও। চেয়েছেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।  

তবে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে বিপিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনীতির মাঠে ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে জনসংযোগ করেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।

বাবা-ছেলে এলাকায় দান করেন দুই হাত ভরে। সৈয়দ আবেদ আলী জীবন তার গ্রামের বাড়িতে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এছাড়া তিনি রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করছেন গরুর খামার ও শপিং সেন্টার। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ।  

স্থানীয়রা জানান, ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রয়েছে তার থ্রি-স্টার হোটেলও।

সামান্য একজন গাড়িচালক থেকে হঠাৎ করে এমন বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ায় তার সম্পর্কে জানার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।  

গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস দিয়ে গেছেন তিনি। সেই ভিডিও শেয়ার করেছেন নিজের ফেসবুকে।  

এলাকাবাসী জানান, আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। তারপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েছেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।  

সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য।  

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন।  

তবে আবেদ আলীর এ অপকর্মের কথা গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ছিল অজানা। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাকে ‘ভালো’ মানুষ হিসেবেই জানতেন।  

এদিকে এসব ব্যাপারে সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে সিয়ামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি। তাদের গ্রামের বাড়িও তালাবদ্ধ।

তবে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আবেদ আলীর পরিবারের সবাই ইউরোপের ভিসা করে রেখেছেন আগেই। যে কোনো সময় দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন তারা।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, যারা অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন করেছেন, তাদের নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন তোলা উচিত। সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রশ্ন ফাঁস করে তারা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার কারণেও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।

দূর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।