মাদারীপুর: কদিন আগেও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর (৬০) গ্রামের আলিশান বাড়িতে ছিল বহু গণ্যমান্যের পদচারণা। বাড়িতে এলেই আশপাশের মানুষেরা ভিড় জমাতো।
ডাসারে অবস্থিত আবেদ আলীর আলিশান বাড়িটি এখন শূন্য পড়ে আছে। একদম ফাঁকা। কারও ছায়ারও দেখা মিলছে না সে বাড়িতে। আলিশান বাড়িটি রাতারাতি ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
আবেদ আলীকে ঘিরে তার নিজ এলাকার মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছিল বেশ আগ্রহ। অকাতরে দান-দক্ষিণা করা পরহেজগার ব্যক্তিটি গ্রামের মানুষের আপদে-বিপদে পাশেই ছিলেন।
মুহূর্তেই ‘দাবার গুটি’ উল্টে যাওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ এখন ধারণা করছেন,‘একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যই আবেদ আলী নিজ এলাকায় ‘ভালো মানুষ’ হয়েছিলেন। আর তার সেই লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে পারে! উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার বাসনা ছিল তার। সেই লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণার কমতি ছিল না।
পিএসসির পরিচালকের গাড়িচালক হয়ে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছানো আবেদ আলীর কীর্তি ফাঁস হলে অনেকটাই ‘ঘুম ভাঙে’ এলাকার মানুষের। হিসাব-নিকাশ মেলাতে শুরু করেন তারা। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা তার আলিশান বাড়িতে এসে ঢুঁ মারছেন দিনের বিভিন্ন সময়। কিন্তু বাড়িতে তালা ঝোলানো। বাবা-ছেলে গ্রেপ্তার হলেও বাড়িতে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। বাতি জ্বলছে না আলিশান বাড়িতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনীতিতে একটা জায়গা করে নিতেই আবেদ আলী হয়ে উঠেছিলেন ‘দানবীর’। অকাতরে দান-খয়রাত, সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকেন। হয়ে উঠেন এলাকার একজন ‘ভালো মানুষ’!
আবেদ আলী ওরফে জীবন তার নিজ গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নে প্রায় ১০ একরের বেশি জমি কিনেছেন। নানা বাড়ির থেকেও প্রায় এক একর জমি কিনে সেখানে নির্মাণ করেছেন তিন তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল একটি বাড়ি। বাড়ির পাশেই করেছেন মসজিদ, আমবাগান, গরুর খামার ও মার্কেট।
বালিগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তথ্য মতে, আবেদ আলী গত দুই বছর ধরে আঁটিপাড়া, পান্তাপাড়া, পশ্চিম বোতলাসহ বিভিন্ন মৌজায় প্রায় ১০ একরের বেশি ফসলি জমি কিনেছেন। বেশিরভাগ জমি তিনি তার নিজ নামে নামজারি করেছেন। এছাড়াও তার স্ত্রী ও ছেলের নামেও জমি কিনেছেন।
বালিগ্রাম ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, ‘আমি এখানে দুই বছর ধরে কাজ করছি। এই সময়কালের মধ্যে আবেদ আলী তার নিজের নামেই প্রায় ৫ একরের মত জমি নামজারি করেছেন। আগেপরে আরও জমি তিনি কিনেছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামেও আলাদা জমি রয়েছে। ’
স্থানীয়রা জানান,‘আবেদ আলীকে ভালো লোক বলেই জানতাম। এলাকায় দানখয়রাত করতেন উদার হাতে। তার দুর্নীতির খবরে আমরা হতবাক। এখন বুঝতে পারছি কীভাবে হতদরিদ্র থেকে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন। ’
মিন্টু সরদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি অসহায় হয়ে পড়ে ২৬ শতাংশ ফসলি জমি আবেদের কাছে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। ’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে আবেদ আলী। আবেদ আলী আরও দুজন ভাই আছেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আবেদ দ্বিতীয়। আবেদের বড় ভাই জাবেদ মীর কৃষি কাজ করেন আর ছোট ভাই সাবেদ মীর সৌদি প্রবাসী হলেও এক বছর ধরে তিনি এলাকায় আবেদের জমিজমার দেখভাল করেন। বড় ও ছোট দুই ভাইয়ের দুই ছেলে থাকেন ইতালি। আর আবেদ আলী দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মীর বংশের একজন হয়েও আবেদ আলীর পরিবারের সব সদস্যের নামের আগে সৈয়দ ব্যবহার করেন।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আবেদ আলীকে নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি বিভিন্ন দপ্তরে। তার অবৈধ কোনো সম্পদ আছে কি না এবং সেগুলোর সঠিকভাবে ক্রয় ও কর দেওয়া হয়েছে কিনা এবং আইনের বাইরে কোনো অবৈধ সম্পদ গড়ে থাকে তাহলে আদালতে নির্দেশে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৪
এসএএইচ