ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘হামার বাবা কাম-কিষাণি করে লেখাপড়া কচ্চে’

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৪
‘হামার বাবা কাম-কিষাণি করে লেখাপড়া কচ্চে’ নিহত আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগমের আর্তনাদ।

গাইবান্ধা: টিউশনির পাশাপাশি সুযোগ পেলেই গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করতেন কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ (২৪)। মেধাবী এ শিক্ষার্থীর বাবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষবাদ করে ছয় ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটানোর সামর্থ্য ছিল না তার। ফলে অভাবের সংসারে লেখাপড়া সুযোগ পাননি কেউই। সেখানে ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু আবু সাঈদ।

খুব ছোট বেলা থেকেই বৃত্তি ও টিউশনির টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে একবুক স্বপ্ন নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি।  শেষ মুহূর্তে একটি বুলেটে বিফলে গেল সব সংগ্রাম-সাধনা। মুহুর্তেই চুরমার হয়ে গেল দরিদ্র বাবা-মাসহ একটি পরিবারের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।  

নিহত আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম আর্তনাদ করতে করতে বলেন, ‌‘হামার বাবা একলা-একলাই লেখা-পড়া কচ্চে। হামার বাবা জীবনে কত কষ্ট কচ্চে। হামার বাবা কাম-কিষাণি করে লেখাপড়া কচ্চে। হামি বিচার চাই। ’

এলাকাবাসী জানায়, ছোট থেকেই আবু সাঈদ ছিলেন মেধাবী। তার ব্যবহারে তার প্রতি সবাই মুগ্ধ ছিল। সে স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। পরে এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যাল‌য় থেকে গোল্ডেন জি‌পিএ-৫ পে‌য়ে এসএস‌সি পাস করেন। এরপর রংপুর সরকা‌রি কলে‌জ থেকেও এইচএসসিতে জি‌পিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বেগম রো‌কেয়া‌ বিশ্ব‌বিদ্যালয়ে ইং‌রে‌জি বিভাগে ভ‌র্তি হন আবু সাঈদ।  

নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সাঈদ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মায়ের। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। মেধা ও আচরণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিল আবু সাঈদ। বেঁচে থাকলে আবু সাঈদ জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন। তার অকাল মৃত্যুতে পুরো গ্রামজুড়ে আজ শুধুই হাহাকার আর আর্তনাদ।  

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে পু‌লিশের সা‌থে সংঘ‌র্ষে নিহত হয় আবু সাঈদ।

মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ তার গ্রামে এসে পৌঁছে। এলাকার শতশত মানুষ তাকে একনজর দেখার জন্য আবু সাঈদের বাড়িতে অপেক্ষামান ছিল। মরদেহ গ্রামে এলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোক আর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে যায়।

বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টায় রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে জাফরপাড়া মাদ্রাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় মানুষের ঢল নামে।  জানাজায় ইমামতি করেন আবু সাঈদের আত্মীয় মো. সিয়াম মিয়া। পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হোন আবু সাঈদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।