ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রেন চলাচল বন্ধ, ময়মনসিংহে কর্মহীন শত শত মানুষ

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
ট্রেন চলাচল বন্ধ, ময়মনসিংহে কর্মহীন শত শত মানুষ

ময়মনসিংহ: কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে গত ১০দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। এতে যাত্রী না থাকায় বেচা-কেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটছে ময়মনসিংহ স্টেশন এলাকার কয়েক শত ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষের।

 

রোববার (২৮ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে নিজ দোকানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন রাজু আহম্মেদ (২৫) নামে এক যুবক।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ি ভৈরব জেলার আশুগঞ্জ থানার সোনারামপুর গ্রামে। বিগত দশ বছরের অধিক সময় ধরে আমি ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে খাঁচিতে করে কলা-রুটির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছি। এ জন্য মাসিক তিন হাজার টাকা ভাড়ায় একটি ব্যাচেলর মেসে থাকি। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টেশনে মানুষজনের আনাগোনা নেই। গত কয়েকদিনে আমার দোকানের তিন হাজার টাকার কলা ও রুটি নষ্ট হয়ে গেছে। এই মাসের বাসা ভাড়াও এখন পকেটে নেই। প্রতিদিন খাবার খরচ হয় দুই থেকে তিন শত টাকা। এই অবস্থা কতদিন চলবে, এখন কি করব ? তাও বুঝতে পারছি না। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

একই অবস্থা নগরীর কালীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সুমন বর্মনের (৩৫)। তিনিও স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মের একজন ব্যবসায়ী। গত কয়েক দিনে তার দোকানের প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সামান্য ব্যবসা করেই সংসার চালাই। গত নয় দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ। এখন পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে বাঁচাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমার মত আরও অনেকের একই অবস্থা। তারাও এখন আমার মত কর্মহীন।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে সামনে শুয়ে আছে একদল পাগল ও যাযাবর মানুষ। এদের কেউ শুয়ে আছে, আবার কেউ বসে আছে আপন মনে। যেন টিকিট কাউন্টারটাই তাদের চিরচেনা বাড়িঘর। তবে স্টেশনের ভেতরের প্লাটফর্মে বসে আছে কয়েকজন পুলিশ ও নিরাপত্তা সদস্য। অলস সময় পার করছেন কয়েকজন স্টেশন ব্যবসায়ী। এর বাইরে স্টেশনের চারপাশে বইছে সুনশান নীরবতা।

একই অবস্থা স্টেশন এলাকার বাইরের হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চা দোকানগুলোর। যেন কোথাও কেউ নেই অবস্থা। এরই মাঝে গরমে অতিষ্ঠ কর্মহীন শ্রমজীবীদের দেখা গেছে টং দোকানের মাচায় এবং ছায়ায় বসে পার করছেন অলস সময়।    

এসময় কর্মহীন শ্রমজীবীরা জানান, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে স্টেশনে যাত্রীদের আনাগোনা নেই। এ কারণে স্টেশন কেন্দ্রিক গড়ে উঠা খাবার হোটেল, ভ্রাম্যমাণ দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় কয়েকশত ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে স্টেশনের কুলি, পানি বিক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে। এদের এখন সংসার নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্টেশন প্লাটফর্মের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) একরামুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কবে ট্রেন চলাচল চালু হবে, তা আমাদের জানা নেই। এটা সরকারের বিষয়। তবে আমরা স্টেশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক দৃষ্টি রেখে দায়িত্ব পালন করছি।  

তিনি আরও বলেন, আগে স্টেশনের পথশিশু ও পাগলাদের জন্য বাইরে থেকে খাবার দিয়ে যেত অনেক মানবিক মানুষ। কিন্তু এখন স্টেশন বন্ধ থাকায় কেউ তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে না।  

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার মো. আব্দুল মালেক বলেন, বর্তমানে ময়মনসিংহ স্টেশনে ১০টি ট্রেন আটকা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিজয় এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, বলাকা কমিউটার, মহুয়া কমিউটার, নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ লোকাল, জারিয়া লোকাল, ভাওয়াল এক্সপ্রেস এবং ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস। এসব ট্রেন ঢাকা-ময়মনসিংহসহ মোট ছয়টি রুটে চলাচল করে।  

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপারিটেনডেন্ট মো. নাজমুল হক বলেন, গত ১৯ জুলাই থেকে ময়মনসিংহ স্টেশনে দশটি ট্রেন আটকা পড়ে আছে। তবে কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।