ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাগেরহাটে স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা, স্ত্রী ও মেয়ে জখম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২৪
বাগেরহাটে স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা, স্ত্রী ও মেয়ে জখম প্রতীকী ছবি

বাগেরহাট: বাগেরহাটে ঘরে ঢুকে মিনাল কান্তি চ্যাটার্জি (৬৫) নামে এক সাবেক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। মারপিটে গুরুতর আহত হয়েছেন ওই শিক্ষকের স্ত্রী ও মেয়ে।

 

সোমবার (৬ আগস্ট) দিনগত রাতে বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের ছোট পাইকপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।

নিহত মিনাল কান্তি চ্যাটার্জি (৬৫) ছোট পাইকপাড়া গ্রামের প্রয়াত কেশব লাল চ্যাটার্জির ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী মধুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আহত তাঁর স্ত্রী শেফালি চ্যাটার্জি (৬০) ও মেয়ে ঝুমা রানী চ্যাটার্জিকে (৩৫) বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেফালি চ্যাটার্জি বলেন, ‘ঘর দরজা সব ভাঙছে, সব কিছু নিয়ে গেছে। কিচ্ছুই নেই। সন্ধ্যার দিকে একদল এসে বাড়ি ঢিলা মারছে। তখনও বুঝিনি, রাত্রিরি আইসে এই ভাবে মাইরা ফ্যালবো। ’

আর্তনাদ করতে করতে তিনি বলেন, ‘এট্টু জায়গা আছে, ওই জায়গা জমিই কাল হইছে। এট্টু সম্পদের জন্নি তো, তোরা সব নিয়ে যাতি, মাইরে ফেললি কেন? সব ভাঙে ফেললি। ’

শেফালি চ্যাটার্জি আরও বলেন, বাড়ি থেকে আসার সময় বলেছি, সব জমি-জমা তোরা খাস, আমাদের তো সব শেষ।

মাথাসহ তার শরীরের বিভিন্ন ক্ষত স্থাতে ৩০ এর অধিক শেলাই দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে পাশের সিটে থাকা তার আহত মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ঘরে আমার ছোট ছেলে ও বোন ছিল। তাদের ঘরের পাটাতনের ওপর ও খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে বাঁচাইছি। আমাগো কি দোষ। আমরা তো কোনো দল করি না। শুধু শুধু আমাগো ওপর কেন হামলা করল। আমার বৃদ্ধ বাবাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটায় মেরে ফেলল। ’

ঝুমা রানী চ্যাটার্জি আরও বলেন, প্রতিবেশী হুমায়ুন শেখ ও  নুরুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় নুরুল ইসলাম বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে যান। রাতে মুখোশ পড়ে এসে আমাদের ওপর হামলা ও ভাঙচুর-লুটপাট করে। ঘরের সবকিছু নিয়ে যায় হামলাকারীরা। আমরা এই হত্যা ও লুটপাটের বিচার চাই।

এদিকে এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার পর থেকে হুমায়ুন শেখ ও নুরুল ইসলাম শেখ পলাতক রয়েছেন। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে কচুয়া উপজেলার বাধাল এলাকায় নাজমা সিকদার সেতারা (৫৩) নামের এক নারীকে পিটিয়েছে-কুপিয়েছে প্রতিপক্ষরা। তার বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগি গবাদিপশুসহ সবকিছু নিয়ে গেছে। গোপালপুর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজমা সিকদার সেতারা (৫৩) বলেন, স্থানীয় নিলু, শহীদ, আছাদ ও মাহফুজদের সঙ্গে আমার মামলা ছিল। তারাই আমার ওপর হামলা করেছেন। তাদের মারধরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। পাসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। সব কিছু লুট হয়েছে গেছে। বাড়িতে কিচ্ছু নেই।

এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়সহ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কিছু নেতা-কর্মীর আহত হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে আহতদের সংখ্যা এবং পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মারধরে আহত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আহত ৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। বিভিন্ন উপজেলায়ও আহতরা চিকিৎসা নিয়েছেন বলে খবর রয়েছে।

তবে এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকের মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।