বরিশাল: সর্বত্র জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে বরিশালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১১ আগস্ট) বেলা ১১টায় বরিশাল নগরের আশ্বিনী কুমার হল চত্বরে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ শান্তি শৃঙ্খলারক্ষায় স্থানীয় ছাত্র-জনতা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে ছাত্রদের সহায়তা করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুরভিত্তিক সন্ত্রাসী ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার দাবিতে বরিশালের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বিএম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমি হকের সভাপতিত্বে ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন ও মারিয়াম বিনতে মোর্শেদ, বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত আরা রিয়া, বরিশাল পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী সোহানুর ইসলাম সিয়াম, বরিশাল কলেজের শিক্ষার্থী রাইদুল ইসলাম সাকিব ও নদী আক্তার, বরিশাল টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ইসান ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাইয়ে গণহত্যায় শতাধিক ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে এবং কয়েক হাজার আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এসব ভাইদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারী সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে আমাদের দেশকে মুক্ত করেছি। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের অর্জনকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য সারা দেশে লুটপাট, অগ্নিসংযোগে মেতে উঠেছে। এসব দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে আমরা পাড়ায়-মহল্লায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। সারা দেশ জুড়ে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছাত্র ভাইয়েরা রাত দিন কাজ করছে। সব ধরনের পরিবহন শ্রমিকদের ট্রাফিক নিয়ম মেনে রাস্তায় শৃঙ্খলভাবে চলার আহ্বান জানাচ্ছি এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কাজে নিয়োজিত ছাত্র ভাইদের সব পরিবহন চালক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করার অনুরোধ করছি। অবিলম্বে প্রশাসনকে তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে মাঠে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
তারা বলেন, এ দেশ আমাদের সবার। সবাই মিলে দেশকে একটি মানবিক সমাজে রূপান্তর করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব শহীদ পরিবারকে তাদের এক জীবনের উপার্জন সম ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারীদের অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জুলাই গণহত্যায় শহীদ সব ভাইদের জাতীয় বীর স্বীকৃতি দিয়ে তাদের নিজ শহরে স্মৃতিফলক উন্মোচন করতে হবে।
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। সব শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবর্ষ থেকে বৈধ সিটের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনে হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে এবং চিকিৎসা সেবা কার্ডের মাধ্যমে সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের সদা জাগ্রত থাকতে হবে। আজ থেকে অত্র এলাকায় (বরিশাল) পুলিশসহ কোনো দল, বা গোষ্ঠী কোনো দোকান, প্রতিষ্ঠান, বাসাসহ কোনো জায়গা থেকে কোনো চাঁদা তুলতে পারবে না। কোনো ধরনের চাঁদাবাজির খবর যদি ছাত্র-জনতার কাছে আসে তাহলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করা হবে। কোথাও কোনো সন্ত্রাস, অরাজকতা, লুটপাট করা যাবে না। আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেউ কোনো মহড়া দিতে পারবে না। প্রত্যেকের কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে। কথা বলার জন্য কেউ কারও ওপর হামলা করতে পারবে না, কথা বলার জন্য কাউকে পুলিশি হয়রানি নির্যাতন, গ্রেপ্তার করা চলবে না। জোর করে কাউকে মিছিল সমাবেশে নিয়ে যাওয়া চলবে না। পুলিশ বেআইনিভাবে কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করতে পারবে না। হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করতে পারবে না। যথাযথ সম্মান দিয়ে পুলিশ মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে মোটরসাইকেল মহড়া দেওয়া যাবে না। নারীদের সঙ্গে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে, কোন ধরনের যৌন হয়রানি, নির্যাতন, উত্ত্যক্ত করা বা ইভটিজিং করা চলবে না। এ ধরনের কাজ কেউ করলে তাকে শিক্ষার্থী জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। বিভিন্ন ধর্মের কিংবা জাতিসত্তার মানুষ ও তাদের বাড়ি-ঘর কিংবা উপাসনালয়ে হামলা করা চলবে না। রাস্তায় কোনো ময়লার ভাগাড় থাকতে পারবে না, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ, ন্যায্য পরিবহন ভাড়া ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা নগরে একটি মিছিল বের করে। যা নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৪
এমএস/আরআইএস