ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভাঙ্গায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে দখলমুক্ত হলো বাস কাউন্টার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
ভাঙ্গায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে দখলমুক্ত হলো বাস কাউন্টার

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে কয়েকটি বাস কাউন্টারের ঘর দখলমুক্ত হয়েছে।  

রোববার (১৮ আগস্ট) সকালে ঢাকা-খুলনা-ভাঙ্গা মহাসড়কের পৌর সভা সংলগ্ন সড়কের পাশে থাকা কয়েকটি বাস কাউন্টার দখলমুক্ত করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মুন্সীর নির্দেশে ভাঙ্গা পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনাসহ পরিবহন কাউন্টার ঘর জোর করে দখলে নিয়েছিলেন তার লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট বিকেলের পর থেকে পৌর এলাকায় বাসের কাউন্টার ঘর দখলসহ মহাসড়কে বিভিন্ন চাঁদাবাজির জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছেন উপজেলা বিএনপি ও সাবেক স্বতন্ত্র এমপি নিক্সন চৌধুরীর অনুসারী প্রভাবশালী একটি মহল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুন্সীসহ ভুক্তভোগী কয়েকজন শ্রমিক গত ১৩ আগস্ট ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ফরিদপুর সেনাবাহিনীর ক্যাম্পসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বাস কাউন্টারগুলো অবৈধ দখলমুক্ত হয়। পরে পুনরায় প্রকৃত বরাদ্দপত্রের শ্রমিকেরা বাসের কাউন্টার বুঝে পান। এতে সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শ্রমিকরা।

শ্রমিক আছাদ মাতুব্বরের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরদিন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়। এই সুযোগে ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান মুন্সির নির্দেশে তাঁর ছেলে জিতু মুন্সি, বিল্লাল শরীফ, বিপ্লব ফরাজী, রবিউল মাতুব্বর ও সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত ভাঙ্গা পৌর সভার সাবেক দুজন জনপ্রতিনিধি ও তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন লোক সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ওপরে হামলা চালায়। পরে তাদের কয়েকটি বাস কাউন্টারের ঘর জোর করে দখলে নেয় হামলাকারীরা।  

ভুক্তভোগী কয়েকজন শ্রমিক জানান, তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে তাদের বাস কাউন্টারগুলো জোর করে দখলে নেয় হামলাকারীরা। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আমরা অভিযোগ দেই। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা অভিযোগের সত্যতা পান। এরপর অবৈধ দখলদারদের দখলমুক্ত করার জন্য দুদিনের আল্টিমেটাম দেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।

শ্রমিক শরীফ মাতুব্বর জানান, দুদিন পার না হতেই উপজেলা বিএনপির সাধারণ ও তার সহযোগী কয়েকজন সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগ নেতারা শ্রমিকদের মোবাইলে জানান, ‘তোমরা তোমাদের বাস কাউন্টারে বসো’। আমাদের কোনো লোকজন তোমাদের হয়রানি করবে না।  

আরেক শ্রমিক করিম শরীফ জানান, এমন জটিল সমস্যার সমাধান একমাত্র সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপেই উদ্ধার হওয়া সম্ভব হলো। এতে প্রতিদিনের মতো তাদের আয়ের ব্যবস্থা পুনরায় শুরু হলো এবং সংসার চালানোর জন্য দুশ্চিন্তাও তাদের দূর হয়েছে।  

ভাঙ্গা পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মুন্সী মনিরুজ্জামান জানান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিব মুন্সীর ছেলে বাহাউদ্দিন জিতু মুন্সী উপজেলা বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে এখনও বহাল রয়েছেন। অথচ ২০১৬ সাল থেকে ফরিদপুর-৪ এর সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর দলে যোগ দিয়ে হালুয়া রুটি খাওয়াসহ তার বাবাকেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরাপদে রেখেছেন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পরদিনই ভাঙ্গায় বাস-কাউন্টার দখলসহ দলীয় শৃঙ্খলা পন্থি কাজে লিপ্ত হয়েছেন।  

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বাহাউদ্দিন জিতু মুন্সী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি আপনাকে চিনি না, তাই এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।  

তবে ২০২১ সাল থেকে সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর দলে যোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।  

ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান মুন্সী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ, ওই সব বাস কাউন্টারের কাছেও যাই না কখনও, দখলতো দূরের কথা’।

ফরিদপুর সেনাবাহিনীর ক্যাম্প সূত্র জানায়, লিখিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অবৈধ দখলদারদের কাউন্টারগুলো ছেড়ে যেতে বলা হয় এবং তারা সরে গেছে। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।