ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ২০ আগস্ট ২০২৪, ১৪ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি, বন্যার আশঙ্কা

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৪
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি, বন্যার আশঙ্কা

নোয়াখালী: গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে পুরো নোয়াখালী জেলা। জেলার নয়টি উপজেলায় বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ প্রধান সড়কও পানিতে ডুবে গেছে।

এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এতে লোকজনের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।  

এদিকে খাল উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন স্থানীয়রা।  

আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

জানা যায়, টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নোয়াখালী জেলা জুড়ে। এ জেলায় পানিবন্দি প্রায় ২০ লাখ মানুষ। জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নীচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা।  

বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি। এছাড়া মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক জমিতে আমন লাগাতে পারছেন না। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের ব্যাপক জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নোয়াখালীবাসীকে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দ্রুতই জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান পানিবন্দি মানুষজন।

জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম চর উরিয়ার রেজাউল হক জানান, টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে পানি ওঠে গেছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। গত রাতের টানা বৃষ্টিতে পানি এখন রান্না ঘরে ঢুকে গেছে। বাড়ির কেউই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, শহরের সব রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষের বাসার ভেতরে পানি থই থই করছে। এতে মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে। যার কারণে কোন যাত্রী পাচ্ছি না। বাড়িতেও পরিবারের লোকজন পানিবন্দি রয়েছে। কীভাবে বাঁচবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাহাব উদ্দিন জানান, রাস্তাঘাট ডুবে এখন মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি নেমে যায় কিন্তু এবার পানি নামছে না। পানিবাহিত অসুখ বেড়েই চলছে।

কবিরহাট উপজেলার রুবেল জানান, হাঁটু পানি দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালীরা। খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও খাল দখল করে বাড়িঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পানি নামছে না। সেনাবাহিনী এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে খাল পরিষ্কার করে দিলে জলাবদ্ধতা থাকবে না।

সুবর্ণচর উপজেলার হারিচ চৌধুরী এলাকার ফারজানা আক্তার জানান, সুবর্ণচরের বেশিরভাগ এলাকার কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বীজতলা।  

জেলা জুড়ে জলাবদ্ধতার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টির পানিতে ময়লা মিশে দেখা দিয়েছে পানি বাহিত রোগ। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসন ও বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নোয়াখালীর আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু সতর্ক সংকেত চলছে আমরা জেলেদের তীরবর্তী স্থানে থাকতে বলেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানান, নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি। এছাড়া জোয়ার থাকায় পানি নামতে পারছেনা। আমরা জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছি। এতে করে সব উপজেলায় পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা। তাছাড়া পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, সবার সহযোগিতায় আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অবৈধ বাঁধ কেটে পানি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানি কমে যাবে। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সব মাধ্যমিক, প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের বলা হয়েছে। যেখানে যে সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।