ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, ২৯ আগস্ট ২০২৪, ২৩ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে: ড. আলী রীয়াজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে: ড. আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন ড. আলী রীয়াজ। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)- এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সবগুলোই সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকরণের শিকার হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ড. আলী রিয়াজ বলেন, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়। ছাত্র-জনতার অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তথ্যমতে, এ অভ্যুত্থানে ৭৫০-এরও বেশি প্রাণহানি হয় এবং দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশাল পরিবর্তন সূচিত হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন এবং ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এ নতুন সরকারের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সবগুলোই সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকরণের শিকার হয়েছে। সংবিধানিক সংস্থাগুলোর স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা জনগণের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নীতিমালা জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং জ্বালানি খাতে স্বার্থবাদী একটি নেটওয়ার্ক গঠিত হয়, যারা নিজেদের স্বার্থে এ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ঋণ খেলাপিদের বিচার থেকে রক্ষা করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে বিপদাপন্ন করেছে। সরকারের সঙ্গে যুক্ত একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠী জ্বালানি খাতের ভর্তুকি পকেটস্থ করেছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।

এই সবকিছুর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি, সংবিধানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গণজাগরণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এ আশা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে সরকারের প্রতি বিশাল দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে, আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। ’ এ প্রেক্ষাপটে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিজিএস এর পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো টেকসই গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংলাপের আয়োজন করা। এ সংলাপগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ সংগ্রহ করা হবে। এর ফলে, ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে, যা গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

এ লক্ষ্যে আগামী ৫ মাসে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করা হবে। এ সংলাপগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পর্যায়ের সংলাপের অংশ হিসেবে ঢাকায় মোট আটটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

সংলাপের বিষয়বস্তুগুলো হচ্ছে- সংবিধান, মানবাধিকার ও গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, বিচার ব্যবস্থা, নাগরিক প্রশাসন, সংবিধানিক সংস্থাসমূহ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক ঋণ এবং গণমাধ্যম।

এছাড়াও আঞ্চলিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এবং খুলনায় চারটি আঞ্চলিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের প্রত্যাশা, প্রস্তাবনা ও সুপারিশ উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারবেন।

সিজিএস জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রতিটি সংলাপের আলোচনা ও নির্দিষ্ট সুপারিশের সারসংক্ষেপ সবার জন্য প্রকাশ করবে এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবে। সিজিএস বিশ্বাস করে এ সংলাপগুলো দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠায় ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, শুধু অন্তর্বর্তী সরকার সব দায়িত্ব পালন করবে, এটা যেন না হয়, সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। সহযোগিতা করতে চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো মিস ইনফরমেশন, ডিস ইনফরমেশন দিয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে সত্য তুলে ধরুন। আমাদের গণমাধ্যমের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. আলী রীয়াজ বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রস্তাব দেখেছি, তারা প্রস্তাব দিয়েছে দলীয় প্রধান আর সরকার প্রধান যেন এক না হন। আমি মনে করি, ক্ষমতা এককেন্দ্রিক যেন না হয়। কোনো ব্যক্তির ক্ষমতার দুই মেয়াদই যথেষ্ট।

সংবাদ সম্মেলনে সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের অনেক কিছু করার আছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে চাই। সে লক্ষ্যে সিজিএস ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
টিআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।