ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ন্যায় বিচার ও কর্মসংস্থান চান ছাত্র আন্দোলনে নিহত সেলিমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
ন্যায় বিচার ও কর্মসংস্থান চান ছাত্র আন্দোলনে নিহত সেলিমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী  নিহত সেলিম তালুকদার ও তার স্ত্রী সুমী আক্তার

ঝালকাঠি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে একজন নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সেলিম তালুকদার (২৮)। ১৮ জুলাই আন্দোলনে থাকা অবস্থায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হলে ১৪ দিন পপুলার হাসপাতালের আইসিউতে থাকা অবস্থায় ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

১ আগস্ট সকালে চিকিৎসকের দেওয়া মৃত্যু সনদ নিয়ে নলছিটিতে পৌঁছাতে রাত হলে ২ আগস্ট সকালে তার নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। বছর খানেক আগে বিয়ে হওয়ায় স্বামীহারা শোকে বাকরুদ্ধ দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুমী আক্তার। তার দাবি হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার ও সরকার কর্তৃক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার।  

নিহত সেলিমের শোকার্ত স্ত্রী সুমী আক্তার দুঃখ ভারাক্রান্ত অবস্থায় বলেন, গত ১৮ জুলাই মধ্য বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে সকালে নারায়ণগঞ্জে তার অফিসের কথা বলে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। তাকে ফোন দিলে তখন বুঝতে পারি সে আন্দোলনে তখন বাসায় আসতে বললে বলে আসতেছি একটু পরে। সে আসা আর হলো না সেলিমের। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন। কে বা কারা তাকে মুগদা হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে সেলিমের মোবাইলে থাকা আমার শাশুড়ির মোবাইল নম্বরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফোন দেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ফোনে খবর পেয়েই তারা ওই হাসপাতালে ছুটে যান। তার মাথা, বুক ও পিঠে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। সেলিমের অবস্থা খারাপ দেখে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও আইসিইউ খালি পাইনি। একই সঙ্গে প্রশাসনিক হয়রানির ভয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি নিতেও অস্বীকৃতি জানায়। অসহায় অবস্থায় ঘুরে ঘুরে হাসপাতাল খুঁজতে খুঁজতে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয় সেলিমকে। ৩১ জুলাই রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।  

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমী আরও বলেন, প্রায় এক বছর আগে বিয়ে আমাদের। বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে সদ্য স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন সেলিম। তারা তিন বোন, এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজো।  

হতাশা প্রকাশ করে সুমী বলেন, পুলিশ যেভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে সেটা মনে হচ্ছে পরিকল্পিত। আমি আমার স্বামী হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার চাই।  

এসময় সুমী বলেন, সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিলে অনাগত সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন হতো। তাই সরকারের কাছে কর্মসংস্থান পেতে আকুতি ও দাবি জানান নিহত সেলিমের স্ত্রী সুমী।  

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১২ ঘণ্টা পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১৪দিন আইসিইউতে থেকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সেলিম তালুকদার (৩০)। সেলিম ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার মল্লিকপুর গ্রামের মো. সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে।  

নিহত সেলিম তালুকদারের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমার ছেলেটা আইসিইউতে ছিল। সেখানে অনেক কষ্ট পেয়েছে, চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। যদি সেদিন গুলি লাগার পর সেখানেই মারা যেত, তাহলে হয়ত এত কষ্ট পেত না। আমি চাই না আর কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি হোক।  

মো. সুলতান হোসেন তালুকদার জানান, এখন আমাদের আর কিছু করার নাই, কী করবো, কীভাবে চলবো ভেবে পাচ্ছি না।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।