ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের এক মাস পূর্ণ হলো বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর)। আন্দোলন-গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এদিন সারা দেশে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বাগেরহাট: বাগেরহাটে ‘শহীদি মার্চ’ পালন করেছেন ছাত্র-জনতা। বিকেলে জেলা শহরের দশানী শহীদ স্মৃতি সৌধের সামনে থেকে একটি র্যালি বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়।
অন্যদিকে, একই সময়ে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের সামনে আরও একটি র্যালি বের করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। পরে এই র্যালিটিও শহীদ মিনার চত্বরে এসে মিলিত হয়।
র্যালি ও সমাবেশে শিক্ষার্থীরা গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদদের স্মরণ ও রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় ছাত্র-জনতাকে। ‘আবু সাইদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ‘শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার চা ‘, ‘শিক্ষার্থীদের বাংলায়, হামলা-মামলার ঠাঁই নাই’, ‘আপস না সংগ্রাম’ -এসব নানা বিপ্লবী স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থী সাবিহা খন্দোকার, স্নিগ্ধা জামান, শেখ বাদশা, শেখ হাবিবুর রহমান, মিথুন সরদার প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্ণ হওয়ায় শহীদদের স্মরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র্যালি ও আলোচনা সভা হয়েছে। দুপুরে জেলা শহরের টেংকের পাড় মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘শহীদি মার্চ’র এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, শিক্ষার্থী আল মামুন, দুর্জয় মাহমুদ, রেহেনা বুশরা, মুনিয়া, রিয়াদুল ইসলাম, আবু বাশার সানি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. নিয়াজুল করিম প্রমুখ।
সভায় বক্তারা ছাত্র আন্দোলনে সব শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার বাহিনী ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছে। যারা দেশে পুনরায় বৈষম্য সৃষ্টি করতে চাইবে, তাদের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন থেকে অভিজ্ঞতা নিতে হবে। দেশে যে-ই সরকার গঠন করুক, এসব ঘটনার দ্রুত বিচার করতে হবে, অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
পরে একটি র্যালি টেংকের পাড় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
লক্ষ্মীপুর: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে লক্ষ্মীপুরে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকালীন নিহত শিক্ষার্থীদের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দেয় তারা।
বিকেলে জেলা শহরের বিজয় চত্বর (ঝুমুর) থেকে শহীদি যাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। শহীদি যাত্রাটি ঢাকা-লক্ষ্মীপুর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ আফনান চত্বর (উত্তর তেমুহনী) গিয়ে শেষ হয়। এর আগে আন্দোলন চত্বরে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারী টিপুসহ তার দোসরদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নতুন সরকারের উপদেষ্টাদের আরও তৎপর হয়ে আহত-নিহতদের তালিকা তৈরির আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মো. বায়েজিদ হোসাইন, মো. এনামুল হক, মো. সরওয়ার হোসাইন, মো. পারভেজ হোসাইন, মো. রেদোয়ান হোসেন রিমন প্রমুখ।
মাগুরায়: বিকেলে মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শহীদ মিনার চত্বরে ‘শহীদি মার্চ’ পালন করা হয়েছে।
মাগুরা সরকারি কলেজে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান সারা জীবন থাকবে। তারা আমাদের জীবনে হৃদয়ের মনি কোঠায় গেঁথে থাকবে। শহীদদের নাম বাংলার মাটিতে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে।
মেহেরপুর: মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’ পালিত হয়েছে। সকাল ১১টার দিকে মিছিলের মাধ্যমে এ কর্মসূচি পালন করে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মিছিলটি শহীদ শামসুজ্জোহা পার্ক থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এ সময় নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তামিম, সিয়াম, জাঈম, শীতল, ফারদিন, কৌশিক, অয়ন, জাবির, আশিক, এস এম প্লাবন, জাইম আল হাসানসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পাবনা: ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পাবনা জেলার সদস্যরা। বেলা সাড়ে ১১টায় পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ চত্বর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা মিছিল বের করেন।
কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচির আওতায় মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আব্দুল হামিদ সড়কের জিরো পয়েন্ট শহীদ চত্বরে এসে সমাবেশে মিলিত হন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, ইউসুফ আরফান বিপ্লব, শাওন হোসেন, মনিরা, মনজুরুল ইসলাম, শামীম হোসেন, মোহম্মাদ মনিরুল হাসান মুন্না, বরকতুল্লাহ ফাহাদসহ অন্যরা।
বক্তারা পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগসহ তাদের অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শহীদ জাহিদ ও মাহবুব নিলয়ের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জেলা শহরের পান্না চত্বর থেকে শোক র্যালি বের করা হয়। সেখানে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।
র্যালিটি শহরের বড়পুল মোড় ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে মাঠে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিকেলে সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এ সময় শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য তড়িঘড়ি না করে আগে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচিতে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরার অন্যতম সমন্বয়ক নাজমুল হোসেন রনি, নাহিদ হাসান, মোহিনী তাবাসসুম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, সুহাইল মাহদিন সাদি, নুহা আনসারীসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পঞ্চগড়: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে নিহত শহীদদের স্মরণে ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একমাস পূর্ণ হওয়ায় পঞ্চগড়ে ‘শহীদি মার্চ’ পালন করা হয়েছে।
বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের আয়োজনে জেলা শহরের জজকোর্ট এলাকা থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সমাবেশে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি, মোকাদ্দেসুর রহমান সান, সহ-সমন্বয়ক আতিকুর রহমান আতিক, হাবিবুর রহমান শাওন, খোরশেদ মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশ দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন হলেও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার দোসরেরা বিভিন্ন রূপে ফিরে আসতে চাচ্ছে। কখনও আনসার হয়ে, কখনও রিকশাচালক হয়ে। তাদের আমরা সাবধান করে দিতে চাই। দেশ নিয়ে তাদের ছিনিমিনি খেলা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা তাদের কখনও বরদাশত করব না।
খাগড়াছড়ি: বিকেলে খাগড়াছড়ি সদরস্থ শাপলা চত্বর পৌরসভা ঈদগাহ মাঠ থেকে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আয়োজনে শিক্ষার্থীরা খাগড়াছড়ি জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা শাপলা চত্বরের মুক্ত মঞ্চে বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্য শেষে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কেউ যেন ম্লান করতে ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেদিকে শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আহত তিন শিক্ষার্থীতে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন আন্দোলনকারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪
এসআরএস