ঢাকা: দুই দফায় ৫৯ জেলায় নিয়োগ পাওয়া নতুন জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অনেকের বিরুদ্ধে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ অসন্তোষ নিয়ে বঞ্চিতরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে জনপ্রশাসনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও কে এম আলী আযমের কক্ষে যান। সরকারের পট পরিবর্তনের পর নিয়োগ পাওয়া এ দুই যুগ্মসচিবের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে তারা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল চান।
মঙ্গলবার দুপুরে ৩৪ জেলায় ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পর বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ভিড় করতে থাকেন। তারা দাবি করেন, বিএনপিপন্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের আমলে তারা পদায়ন-পদোন্নতির ক্ষেত্রে নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। বঞ্চিত কর্মকর্তারা দাবি করেন, যাদের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা ওই দুই যুগ্ম সচিবের কাছে জানতে চান, তারা থাকতে কীভাবে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। জবাবে তারা জানান, মূলত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তখন উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই যুগ্ম সচিবের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় উৎসুক বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জটলা দেখা যায়। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ওই দুই যুগ্ম সচিব এবং ২৫-৩০ জন বঞ্চিত কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কক্ষে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তারা বের হয়ে আসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কক্ষ থেকে বের হয়ে বঞ্চিতদের কয়েকজন বলেন, তারা ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তিনি দাবি তুলে ধরবেন। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। সে পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন।
বঞ্চিতরা দাবি করেন, সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় দীর্ঘদিন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে মোটা অংকের বিনিয়োগ, সহকর্মীকে হেনস্তারও অভিযোগ রয়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, যারা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের অনেকের নাম দিয়েছেন তানভীর নামে এক সমন্বয়ক। তবে সেই তানভীরের বিষয়ে বিস্তারিত তারা জানাননি।
বঞ্চিত এক কর্মকর্তা দাবি করেন, ডিসি নিয়োগের জন্য ৬১৭ জনের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ১০৬ জনের ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়। ফিটলিস্টে বেশি সংখ্যক রাখার উদ্দেশ্যই হলো সুবিধাভোগীদের নিয়োগ দেওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
এমআইএইচ/আরএইচ