ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গাইবান্ধায় যৌথ বাহিনীর অভিযান, গ্রেপ্তারের পর দুইজনের মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
গাইবান্ধায় যৌথ বাহিনীর অভিযান, গ্রেপ্তারের পর দুইজনের মৃত্যু

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সাঘাটায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইটসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনের মৃত্যু হয়।

বাকি তিন জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুইজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন।  
এর আগে ভোরে ইউনিয়নের গোবিন্দী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।  

মৃত ব্যক্তিরা হলেন- সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দী এলাকার রোস্তম আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫) ও একই এলাকার মালেক উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫)।  

এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল ইসলাম  (৪৫) ও সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে মারা যান সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫)।  

সোহরাব হোসেন আপেল সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী এলাকার রোস্তম আলীর ছেলে ও শফিকুল ইসলাম একই এলাকার মালেক উদ্দিনের ছেলে। আপেল গিাবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ছিলেন।  

গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হওয়া আসামিরা হলেন- চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট ও শাহাদত হোসেন পলাশকে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল এবং রিয়াজুল ইসলাম রকিকে ভর্তি করা হয়েছে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।   

মোশারফ হোসেন সুইট (৪৫) সাঘাটা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দি গ্রামের আব্দুল গণি সরকারের ছেলে। এছাড়া শাহাদত হোসেন পলাশ সাঘাটা ভরতখালীর বাঁশহাটি এলাকার সেরায়েত আলীর ছেলে এবং রিয়াজুল ইসলাম রকি (২৮) উত্তর সাথালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে চিকিৎসাধীন চেয়ারম্যান সুইট ও পলাশকে দেখতে আসেন গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহাবুব হোসেন। এসময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, অসুস্থ অবস্থায় সকালে হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়। ভর্তির পর থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলেও আপেল নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ও আহতদের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে থাকা নিহত সোহরাব হোসেন আপেলের স্বজনদের দাবি, গ্রেপ্তারের পর তাকে মারধর করাসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের কারণেই আপেলের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শাহাদত হোসেন পলাশের দাবি, বাজারে কয়েল নেওয়ার সময় পিছন থেকে তাকে আটক করে যৌথ বাহিনী। এরপর তাকে চেয়ারম্যান সুইটের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর হাত-পাসহ শারীরিকভাবে বেদম মারপিট করে আহত করা হয়। তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। কখনও বাড়িতে কৃষি কাজ করি কখনও ঢাকায় গিয়ে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কোনো অপরাধ ও দোষে আমাকে আটক করা হয়েছে তা জানা নেই।

পুলিশ সুপার বলেন, যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি ও বাঁশহাটি এলাকা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইটসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ও আপেল নামের দুইজনের মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য- মোশাররফ হোসেন সুইট চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মসহ সাধারণ মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন করে আসছিলেন। তিনিসহ তার ভাই সুজাউদৌলার নেতৃত্বে এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তোলেন। যমুনা নদীর চর দখলসহ দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধ বালুমহাল গড়ে তুলে ব্যবসা করতেন। এতে ফসলি জমি নষ্টসহ কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে এলাকাবাসী। এরেইমধ্যে চেয়ারম্যান সুইট ও তার ভাইসহ সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্রকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে কয়েক দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।  

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা,সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।