সিলেট: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে সেনা অভিযানে সংরক্ষিত ইউপি সদস্যের ঘর থেকে অন্তত ২৫ রকমের সরকারি চোরাই ওষুধ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে পুলিশ।
পুলিশের দায়েরকৃত মামলার এজাহারে ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও আদালতে পাঠানো হয়েছে একজনকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে সাবুল আহমদের (৫৫) বসতঘরে খাটের নিচ থেকে কার্টুন ভর্তি সরকারি এক লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের চোরাই ওষুধ জব্দ করা হয় সেনাবাহিনীর অভিযানে। পাশাপাশি নগদ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ দেখানো হয়। এ সময় আটক হন সাবুল আহমদের স্ত্রী মাইজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সেলিনা বেগম।
তার দেওয়া তথ্যমতে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা পাক আক্তার চৌধুরী ও উপজেলার ২নং মাইজগাঁও ইউনিয়ন ১/খ ইউনিটের পরিবার কল্যাণ সহকারি শিল্পী রানীকে আটক করা হয়। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও চলে।
ওষুধ চোরাচালানের এ ঘটনায় থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন জব্দতালিকা প্রস্তুতকারী এসআই অসিত রঞ্জন দেব। এ মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পাক আক্তার চৌধুরী ও শিল্পী রানীকে ছেড়ে দেওয়া হয় থানা থেকেই। অথচ পরদিন রোববার গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য সেলিনা বেগমকে আদালতে পাঠানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বর পাক আক্তার চৌধুরী ও শিল্পী রানীকে ছাড়াতে স্থানীয় এক নেতার মাধ্যমে পুলিশকে ম্যানেজ করেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম। এরপর ওইদিন রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে দুই নারী কর্মচারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুই নারীকে ছাড়াই শুধু ইউপি সদস্য সেলিনা বেগমকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। যদিও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ওইদিন ছুটিতে ছিলেন, ফেঞ্চুগঞ্জে আসেননি।
জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) অসিত রঞ্জন দেব বলেন, চোরাই ওষুধসহ সেনাবাহিনী মহিলা ইউপি সদস্যকে আটক করে। তাকে দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য দুজনের নাম তদন্তে নিশ্চিত হয়ে মামলার এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করি। তবে গ্রেপ্তারের বিষয়টি টাইপিং মিস্টেক ছিল বলেও দাবি করেন তিনি। এ ঘটনায় আদালতে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী আতাউর রহমান বলেন, এ মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার ও এ মামলায় আসামিও করা হয়। মামলার এজাহারেও ৩ জনকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিষয়টি ভুল ছিল বলে দাবি করেন ওসি। ওই এজাহারে ভুল থাকলেও না দেখে তিনজন কর্মকর্তার-ই কীভাবে স্বাক্ষর দিলেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা ‘প্রিন্টিং মিস্টেক’ ছিল। যে কারণে রোববার আদালতে ভুল সংশোধনের একটি দরখাস্ত পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। বক্তব্য নিতে হলে তার দপ্তরে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান বলেন, ‘তিন আসামি গ্রেপ্তার ও একজনকে আদালতে চালান দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ জানতে পেরেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অনিয়ম পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, যদি কোনো কর্মকর্তা এজাহারে আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরবর্তীতে সেটাকে ভুল হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে দরখাস্ত দেন। এতে ঘটনায় সন্দেহের উদ্রেক হয়। সাধারণত এ ধরনের ঘটনা কখনো চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি করে পৃথক তদন্ত হওয়া উচিত। ভুল হলে তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখে সুপারিশ করবে।
এদিকে, সেনা অভিযানে উদ্ধার হওয়া সরকারি চোরাই ওষুধ জব্দ তালিকায়ও অভিযুক্ত তিনজনের নাম ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। পরদিন ওই এজাহার আদালতে দাখিল করা হয়। অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো এজাহারটি আদালত গ্রহণ করেন। কিন্তু আসামি হিসেবে কেবল ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তারকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দেওয়া হয়। আর ওই এজাহারে স্বাক্ষর করেন তিন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
এনইউ/জেএইচ