ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যা জানাল আইএসপিআর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যা জানাল আইএসপিআর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)

ঢাকা: তিন পার্বত্য জেলায় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণ এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আইএসপিআর জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল লোকের পিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামে এক যুবক নিহত হন।

 

পরে সদর থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধারপূর্বক ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে।  

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীঘিনালা কলেজ হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) কতিপয় সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।  

সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের ছয়জন আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।  

পরে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়।  

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকাসমূহে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাকর করে তোলে।  

দ্রুততার সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সকল উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করতে বলা হয়।

খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল রাত সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষ রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। ওই গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।  

একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সঙ্গে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসে ভাঙচুর করে।  

আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়।  

এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত লোক একটি মিছিল বের করে বনরুপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরুপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে করে উভয় পক্ষের বেশকিছু লোকজন আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

উল্লিখিত ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে উল্লেখ করে আইএসপিআর থেকে বলা হয়, অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।