কক্সবাজার: সকালে মানববন্ধন, বিকেলে শান্তি শোভাযাত্রা ও সন্ধ্যায় জগতের সকল প্রাণীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনার মধ্যে দিয়ে শেষ হচ্ছে রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ উপলক্ষে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজারের রামু মৈত্রী বিহার প্রাঙ্গণে রামু বৌদ্ধ যুব পরিষদ ও বিকেলে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার এক যুগ পার হলেও একটি মামলারও বিচার শুরু হয়নি।
তারা এসব মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি না করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উত্তম বড়ুয়া নামে এক স্থানীয় বৌদ্ধ যুবক পবিত্র কোরআন অবমাননা করেছেন বলে গুজব ছড়ানোর পর ১৮টি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধদের শতাধিক বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। পরদিন একইভাবে উখিয়া-টেকনাফের সাতটি বৌদ্ধ বিহার ও ১১টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু ১২ বছর পার হলেও একটিরও বিচার কাজ হয়নি।
রামু ট্র্যাজেডির ১২ বছর উপলক্ষে রোববার সকালে লালচিং-সাদাচিং-মৈত্রবিহার ও প্রাঙ্গণে প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ।
উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের অধ্যক্ষ বিজয় রক্ষিত মহাথেরোর সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সভাপতি কেতন বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া আব্বু, রাজেন্দ্র বড়ুয়া, বিমল বড়ুয়া, প্লাবন বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এর আগে সকালে দিনটি উপলক্ষে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান ও ধর্ম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার থেকে শান্তি শোভাযাত্রা বের করে কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ।
শোভাযাত্রাটি বিহার প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে প্রধান সড়ক ও রামু বাইপাস প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত শোভাযাত্রায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা কয়েক হাজার বৌদ্ধ নর-নারী সমবেত হন। মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন চৌধুরী ও কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদেরর সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বক্তব্য দেন।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, ১২ বছর হয়ে গেল। একটি মামলারও বিচার হয়নি। শুধু রামু হামলা নয়, গত ১২ বছরে গুজবের ওপর ভর করে বিভিন্ন স্থানে অনেক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি ঘটনার বিপরীতে উপযুক্ত বিচারিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও জরুরি এবং এই দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার সঠিক বিচার হলেই এ সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যদি সহনশীল হন এবং নিজেদের বিবেচনাবোধকে কাজে লাগান তাতে করেই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
সন্ধ্যায় দেশ জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং জগতের সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
এসবি/এইচএ/