ফেনী: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে ৫৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতালে মারা যাওয়া ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সাইফুল ইসলাম আরিফকে তার নিজ গ্রামের কবরস্থানে চিরশায়িত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় দাগনভূঞার কৌশল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন।
জানাজার আগে বক্তব্য রাখেন আরিফের বাবা আলতাফ হোসেন, ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, এয়াকুব নবী, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুহিমিন তাজিম, দাগনভূঞা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির এ এস এম নুর নবী দুলাল, সিন্দুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কবির আহমেদ পেয়ার, ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপি নেতা নুরুল হক, দলিলুর রহমান দুলাল, মনসুর আহমেদ, দাগনভূঞা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ সাইফুল ইসলাম আরিফসহ অন্যদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিত করা পযর্ন্ত সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোরও আশ্বাস দেন বক্তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের একদিন আগে গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছিল অগ্নিগর্ভ। নগরের সিআরবি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের সশস্ত্র হামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা মারাত্মক আহত হন। এর মধ্যে মাথায় মারাত্মক জখম হয় ফেনীর দাগনভূঞার দরবেশেরহাট মাদ্রাসার ছাত্র সাইফুল ইসলাম আরিফেরও।
তাকে তখন নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে। দীর্ঘ ৫৭ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে তার মৃত্যু হয়।
যাওয়ার কথা ছিল বিদেশে, চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে
আরিফের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, আরিফ আমার একমাত্র ছেলে। আমি একজন গরিব কৃষক। পরিবারের সচ্ছলতার জন্য ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বিদেশ না গিয়ে আমার ছেলেকে পৃথিবী থেকেই চলে যেতে হয়েছে।
আরিফের বড় চাচা আবুল কাশেম বলেন, ঘটনার ১০ দিন আগে আরিফ চট্টগ্রামের কদমতলিতে আমার বাসায় বেড়াতে আসে। পরে ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় আন্দোলন অংশ নেয়। ওইদিন দুপুর ১টার পর থেকে তার হদিস না পেয়ে তাকে খুঁজতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাই। পরে তার সন্ধান পাই।
আবুল কাশেম জানান, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে আরিফকে কাতারে পাঠানোর জন্য পরিবার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। আগস্টের ৮ তারিখে তার বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি আর হলো না। অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেল না। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৪
এসএইচডি/এইচএ/