ঢাকা: আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী। চন্ডীপাঠ, পূজা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে দিনব্যাপী চলছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
বর্ণিল সাজসজ্জা, ধূপ-আগরবাতির গন্ধ মোহিত করে তুলেছে আঙিনা। দুর্গোৎসবের কারণে মন্দিরে, মণ্ডপে এখন উৎসবমুখর আমেজ। দেবীভক্তদের পদচারণায় মুখরিত পূজা-প্রাঙ্গণ। এ বছর সারাদেশে ৯৪৭টি দুর্গাপূজা কমেছে। তবে রাজধানী শহর ঢাকায় পূজা বেড়েছে চারটি। গতকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি।
সংগঠন দুটির হিসাবে, এ বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ৯৪৭টি দুর্গাপূজা কম হচ্ছে। আর ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি পূজার আয়োজন হয়। সেই হিসাবে এবার ঢাকা মহানগরে চারটি পূজা বেড়েছে।
পূজার সূচি তুলে ধরে বলা হয়, গতকাল বুধবার মহাষষ্ঠী ছিলো। আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) মহাসপ্তমী। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী। শনিবার ( ১২ অক্টোবর) মহানবমী। তবে পঞ্জিকা অনুযায়ী শনিবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমী উদযাপন করা হবে। সেদিন বিকেলে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে।
এর আগে পিতৃপক্ষের অবসানে গত ২ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ সূচিত হয়েছে, যা মাতৃপক্ষ নামেও অভিহিত।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, প্রস্ততি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণে দুর্গত এলাকার কোথাও কোথাও এবার পূজার আয়োজন হয়নি। তবে আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে সব ধর্মের ধর্মীয়, সর্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ধরনের ভয়ভীতি ও পুলিশি পাহারা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সেনাপ্রধান। নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ঘাটতি থাকবে না। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
দুর্গা প্রতিমা ও মন্দিরে হামলার ঘটনার চিত্রও তুলে ধরে সন্তোষ শর্মা বলেন, এবার ১৮টি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়েছে। মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি একটি দ্রুত সাড়া (কুইক রেসপন্স), যা আমাদের সব সময়ের দাবি। এর আগে এটা কোনো সময় পাইনি, এবার পাচ্ছি। এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ।
পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি সারাদেশের পূজা মণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। উচ্চ শব্দের মাইক, পিএসেট ও আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয় সংগীত ব্যতীত অন্য কোনো গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এরূপ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং, ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যে কোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাৎক্ষণিক প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে।
সম্প্রতি গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন শেষে আসন্ন দুর্গাপূজায় কোনো ধরনের শঙ্কা নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবারের পূজা খুব ভালোভাবে হবে। কোনো ধরনের কোনো অসুবিধা হবে না। এ জন্য আপনাদেরও সহযোগিতা চাই। প্রতিবার তো পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকে, এবার বাড়তি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ‘মব কালচার’ আগেও ছিল, এখন সেটি রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৪
জিসিজি/এইচএ/