ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হারিয়ে যাচ্ছে মুক্ত জলাশয়ের দেশি মাছ

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
হারিয়ে যাচ্ছে মুক্ত জলাশয়ের দেশি মাছ

মানিকগঞ্জ: নদী মাতৃক আমাদের এই দেশ, মাছে ভাতে বাঙালি এই কথাটি এখন শুধু মাত্র বই পুস্তকেই সীমাবদ্ধ। বাস্তব চিত্র পুরোটা ভিন্ন।

নদ-নদীর পানি বাড়লেও জেলায় তেমন একটা দেখা নেই দেশীয় মাছের। তাই চাষের মাছের ওপর নির্ভর করে আমিষের ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা, ইছামতি, গাজীখালী, কান্তাবতী, নুরুনিগঙ্গাসহ ছোট বড় মিলিয়ে আটটি নদী বয়ে গেছে। বড় নদী গুলোতে সারা বছরই পানি থাকে তবে ছোট নদী গুলোর মূল অংশে পানি প্রবাহ থাকলেও শাখা খাল গুলো থাকে পানি শূন্য। বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে নদী দখল ও অপরিকল্পিত বাঁধের ফলে নদী হারাচ্ছে তার চির-চেনা যৌবন। মাছ ধরতে বিভিন্ন ফাঁদের অপব্যবহার কারণে নদীতে দেশীয় মাছের উৎপাদন দিনকে দিন কমে আসছে।

জানা যায়, জেলায় এক সময় পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা, ইছামতি, গাজীখালী, কান্তাবতী, নুরুনিগঙ্গা ছিল প্রবহমান নদী। সারা বছর এই সব নদ-নদীতে পানি থাকতো এবং প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছের দেখা মিলতো। গ্রাম-বাংলার দেশীয় মাছের তালিকায় থাকতো মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, শোল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, গজার, বেদা, চেং, টাকি, চিতল, পোয়া, বালিয়া, গুতম, গজারসহ প্রায় ৫০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের মাছ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তা শুধু প্রবীণদের মুখে মুখে শুনা যায়।

তবে বাস্তব চিত্র ভিন্নতর প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অবৈধ কারেন্ট জাল ও প্রচুর পরিমাণে কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে খাল, বিল, পুকুর, ডোবাগুলোতে দেশীয় মাছের বিলুপ্ত হয়েছে। অপরদিকে গ্রাম্য অঞ্চল গুলোতে খাল-বিল, পুকুর ডোবার গভীরতা যেমন কমে আসছে ঠিক একইভাবে ভরাটের কারণে দেশীয় মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। এখন বাঙালিদের আমিষের চাহিদা মেটাতে বিদেশি মাছের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী এলাকার আবু তাহের (৫৫) বলেন, আমরা দেখেছি সারা বছর নদীতে পানি এবং প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছের দেখা মিলতো। বেশ কয়েক বছর যাবত হাটে বাজারে দেশীয় মাছ মানে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি থাকলে হয়ত দেশীয় মাছের দেখা মিলতো। তবে অপরিল্পিতভাবে নদী ভরাট ও নাব্যতা নষ্টের কারণে হারাতে বসেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।  

ঘিওর উপজেলার সদর এলাকার গফুর মিয়া বলেন, বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে নদী তবে এখন আর আগের সেই নদীটি নেই। ছোট বেলায় বেশ কয়েকজন মিলে আমরা নদীতে মাছ ধরতাম। এখন আর সেই চিত্র দেখা যায় না। নদী থেকে মাছ গুলো খালবিলে যাবে সেই অবস্থা নাই কারণ অবৈধ মাছ ধরার ফাঁদের কারণে দেশীয় মাছের সংখ্যা দিনদিন কমে আসছে। নদীর নাব্যতা ও এই অবৈধ ফাঁদের অপব্যবহার বন্ধ হলে পুনরায় দেশীয় মাছ তাদের প্রজনন বাড়াতে পারবে। মানবদেহের আমিষে ঘাটতি মেটাতে অনেকেই এখন বি‌দে‌শি মাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নদী ভরাট, খালবিল, জলাশয়ের পানি না থাকায় দেশীয় মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের দপ্তর থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশীয় মাছকে সংরক্ষণ করার জন্য।

বাংলাদেশ সময়:১০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪.
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।