রাঙামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের পর চলতি মাসের ০৮ থেকে ৩১ অক্টোবর তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে প্রশাসন। পর্যটক না আসায় জেলার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্গত তাঁত ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রাঙামাটিতে বেড়াতে এলে পর্যটকরা স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকের দোকানে যাবেই। সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনে বাড়ি ফিরে যান তারা। এসব পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে জেলার তাঁত শিল্পটা এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে টিকে আছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মামুন নামে এক যুবককে হত্যার পর রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তাজনিত কারণে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৪ দিনের জন্য পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে প্রশাসন। এরপর থেকে এখানকার পর্যটক নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জেলা শহরে পর্যটন স্পটগুলো ঘিরে অসংখ্য স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকের দোকান রয়েছে। এসব পোশাক শিল্পের ওপর পাঁচশর বেশি তাঁতী, শ্রমিক, কর্মচারীরা জীবিকা চালায়। পর্যটক না থাকায় কর্মচারীরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন, লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বিকিকিনি না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী কর্মচারীদের ছাঁটাই করে দিয়েছেন। এসব হস্তশিল্পের কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
রাঙামাটি বেইন টেক্সটাইলের কর্মচারী নর্মদা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে রাঙামাটিতে তেমন পর্যটক নেই। এ কারণে বেচা-বিক্রি ভালো না। এরই মধ্যে প্রশাসনের ২৪ দিনের জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করায় বিকিকিনি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকপক্ষকে।
রাঙাবি টেক্সটাইলের ম্যানেজার উইজি মারমা বলেন, বেকার বসে আছি। পর্যটক নেই তো বেচা-বিক্রি নেই। অনেক কর্মচারী ছুটিতে চলে গেছেন। বেচা-বিক্রি না থাকায় মালিকপক্ষ ভালো নেই।
ঝুম বাজার টেক্সটাইলের কর্মচারী রেখা চাকমা এবং বাসন্ত স্টোরের কর্মচারী রঞ্জনা পাহাড়ি উভয়ের একই কথা। পর্যটক না থাকলেও তারা দোকান খুলে বসে আছেন, কিন্তু বেচা-বিক্রি নেই। এ কারণে তারা ভালো নেই বলে জানান।
এন আর হ্যান্ডি ক্রাপ্টস এর মালিক অনুপম ত্রিপুরা বলেন, সৃষ্ট রাজনৈতিক কারণে তিন পার্বত্য জেলায় কোনো পর্যটন নেই বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই। এইবার টানা ২৪ দিন পাহাড়ে পর্যটক আসতে প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় আমাদের ব্যবসা ধসে গেছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়া পুঁজি থেকে খরচ হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এজন্য তিনি অতি সত্তর এ জেলায় পর্যটকদের আসার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানান প্রশাসনের প্রতি।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। সৃষ্ট রাজনৈতিক জটিলতার কারণে এখানকার পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনছেন।
তিনি আরও বলেন, এখানকার তাঁত ব্যবসাটা টিকে আছে পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে। পর্যটক না থাকলে এ ব্যবসার কোনো ভিত্তি নেই। বর্তমানে পর্যটক না থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, কর্মচারী, তাঁতিরা চরম কষ্টে জীবন পার করছে।
ব্যবসায়ীদের এই নেতা জানান, প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হলে আবারও ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৪
আরএ