লালমনিরহাট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করা উত্তর বাংলা কলেজের সেই অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে এবার মামলার নির্দেশ দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে আদেশের কপি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের হোসেন।
এর আগে রোববার (২০ অক্টোবর) দিনভর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গেটে ওই অধ্যক্ষকে চূড়ান্ত বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার দাবিতে অনশন শুরু করেন একই কলেজের তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না নামে একজন প্রভাষক। পরে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন।
জানা গেছে, আব্দুর রউফ সরকার গত ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর বাংলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করে শিক্ষক কর্মচারীদের ওপর অন্যায়, অনৈতিক আচরণ করে নানান ভাবে হয়রানি করে আসছেন। তার শক্তির প্রধান উৎসে ছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ। অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ তার নিজের অফিসকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পরিণত করেছিলেন।
তার এহেন অত্যাচার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে হয়রানি বেড়ে যেত। অধ্যক্ষের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে গত ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং একই সালের ৮ এপ্রিল রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। এতেও থেমে থাকেননি অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার। তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
পরবর্তীকালে গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না উচ্চ আদালত রিট পিটিশন করলে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং চলতি বছরের ২১ মার্চ স্থগিত আদেশ দেন।
একই সঙ্গে গত ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন। আওয়ামী ক্ষমতার জোরে সব কিছুই হজম করে বহাল তবিয়তে রয়েছেন আব্দুর রউফ সরকার। অপরদিকে নির্যাতিত শিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে কলেজে প্রবেশেও বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ ওই প্রভাষকের।
এদিকে গত জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ উল্লেখ করে গত ১৮ জুলাই নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে আওয়ামী প্রেমকে প্রমাণিত করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার বিজয় হলেও আওয়ামী দোসর অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সপদে বহাল রয়েছেন। আওয়ামী লীগের পতন হলেও প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে আজ অবধি কলেজে প্রবেশ করতে দেননি বা বেতন ভাতাদি প্রদান করেননি। তাই আওয়ামী লীগের দোসর অধ্যক্ষ আব্দুর রউফকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে গত ২০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।
একই সঙ্গে ২০ অক্টোবর দিনভর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটে অনশন শুরু করেন তিনি। জেলা প্রশাসক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে অনশন ভঙ্গ করেন ওই প্রভাষক।
প্রভাষকের দায়ের করা অভিযোগ তদন্ত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ বলে প্রচার করার সত্যতা পায় জেলা প্রশাসন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কটাক্ষ করার অপরাধে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়ে ২১ অক্টোবর পত্র জারি করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) এসএম শাফায়াত আখতার নুর।
প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না বলেন, মামলা ও বরখাস্তের আদেশ দিলেই হবে না। আগামী বোরবারের মধ্যে মামলা ও গ্রেপ্তার করা না হলে পুনরায় অনশন করব।
কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশ্বের হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আদেশের কপি পেয়েছি। জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
** ছাত্রদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ বলা অধ্যক্ষের গ্রেপ্তার দাবিতে প্রভাষকের অনশন
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
আরএ