ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাবেক এমপি বদির ম্যানেজার জাফর ঢাকায় গ্রেপ্তার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
সাবেক এমপি বদির ম্যানেজার জাফর ঢাকায় গ্রেপ্তার

ঢাকা: কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ওরফে ‘ইয়াবা বদি’র ম্যানেজার ও টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফরকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি।

 

শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‍্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।  

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাত ৩টার দিকে রাজধানী ঢাকার পূর্ব বাসাবো এলাকায় যৌথ অভিযান চালিতে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩ ও র‍্যাব-১৫ এর অভিযানিক দল।  

গ্রেপ্তার জাফরকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মো. কামরুজ্জামান।

পরে রাতে মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টেকনাফের ইয়াবা সিন্ডিকেটের সম্রাট আব্দুর রহমান বদির বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিল সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ। সংসদ সদস্য থাকাকালে আব্দুর রহমান বদি নিজের নির্বাচনী এলাকা টেকনাফকে পরিণত করেছিলেন মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার স্বর্গরাজ্যে। আর সেই স্বর্গরাজ্য কার্যক্রমের বিশ্বস্ত সহচর ছিল গ্রেপ্তারকৃত জাফর। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ হাজার ২৭৫ জন মাদক কারবারিকে তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে আব্দুর রহমান বদি ও তার ঘনিষ্ঠ সহচর জাফরকে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৯ সালে আত্মসমর্পণকারী মাদককারবারিরা পুনরায় জামিনে বের হয়ে জাফরের নেতৃত্বে আবার সঙ্গবদ্ধ হয়েছে এবং ইয়াবা কারবারির ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে।

গত ১৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামিও গ্রেপ্তারকৃত জাফর আহম্মদ। এই মামলার প্রধান আসামি ইয়াবা গডফাদার আব্দুর রহমান বদি ইতোপূর্বে র‌্যাবের হাতে আটক হলেও তার বিশ্বস্ত সহযোগী জাফর এতদিন অধরাই ছিল।

গত ৫ আগস্ট রাতে টেকনাফে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাফর এবং তার তিন ছেলের নেতৃত্বে টেকনাফের আলো শপিং কমপ্লেক্স, হোটেল নাফ কুইন ও আব্দুল্লাহ ব্রাদার্স ফিলিং স্টেশনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এসব ঘটনায় পৃথকভাবে তিনটি মামলার রুজু করা হয়, যার সবকটিতেই জাফর আহম্মদকে আসামি করা হয়েছে।

আব্দুর রহমান বদির অপরাধ জগতের বিশ্বস্ত সহচর গ্রেপ্তারকৃত জাফর প্রথম জীবনে ছিলেন পান বাজারের শ্রমিক। সেখান থেকে হয়ে উঠেন শ্রমিক নেতা নামধারী দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ। এই চাঁদাবাজির অর্থে তিনি টেকনাফ সদরের উপজেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে তার আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর কৌশলে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কালের পরিক্রমায় জাফর নানারূপে আবির্ভূত হয়ে আব্দুর রহমান বদির বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে মাদক সাম্রাজ্য সম্প্রসারণপূর্বক অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।

জানা গেছে, ওয়ান ইলেভেনের সময় জাফর গ্রেপ্তার হলে কারাগারে আব্দুর রহমান বদির সঙ্গে তার সব সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করে আব্দুর রহমান বদির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেন এবং আব্দুর রহমান বদির সহায়তায় চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর জেলা পরিষদ সদস্য ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সরকার পতন হলে ১৯ আগস্ট দুই মাসের মাথায় স্বপদ হতে তাকে অপসারিত করা হয়। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বদি ও জাফরের বিরুদ্ধে ভোট ক্রয়, ভোট চুরিসহ ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আব্দুর রহমান বদি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাফরকে নিয়ে সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফকে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত জাফর আহম্মদের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, দুদকের মামলাসহ প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় তিনি জামিনে থাকলেও অধিকাংশ মামলাই বিচারাধীন। ২০২১ সালের ২১শে জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এক মামলায় বিপুল পরিমাণ আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এছাড়াও নাশকতার মামলায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে এতদিন তিনি পলাতক এবং গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপনে ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৪
এসসি/এসবি/জেএইচ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।