রাজশাহী: ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আইন বিভাগের এক শিক্ষকসহ উভয় বিভাগের প্রায় ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই সংঘর্ষের ঘটনার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুই বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক প্রফেসর আখতার হোসেন মজুমদার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৪-২০২৫ স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার আইন বিভাগ ও মার্কেটিং বিভাগের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফুটবল প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর উভয় দলের দর্শক-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই প্রতিযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আহত চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের দেখতে উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ফরিদ উদ্দীন খান, ছাত্র-উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যবৃন্দ, উভয় বিভাগের সভাপতি ও অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা রাবি মেডিকেল সেন্টার ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ও তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এছাড়া পরিস্থিতির অবনতি রোধে মঙ্গলবার উভয় বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এদিন উপাচার্য প্রফেসর সালেহ হাসান নকীব সকাল সাড়ে ৯টায় আইন বিভাগ ও সকাল সাড়ে ১০টায় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে এটা কাম্য নয়। উভয় বিভাগের সঙ্গে বসে শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের রাউন্ড-১৬ পর্বের খেলা শেষে মার্কেটিং ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একে অপরকে ভুয়া বলে সম্বোধন করায়- এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। বিকেল ৫টার দিকে প্রথম দফায় শেখ কামাল স্টেডিয়ামের সামনে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। এতে আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুর রহমানসহ ৫-৬ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা শহীদ হবিবুর মাঠে জড়ো হয়ে ক্যাম্পাসে লাঠিমিছিল করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন এবং রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেন। আর ভবনের অপর পাশে আগে থেকে মার্কেটিংসহ ব্যবসা অনুষদের শিক্ষার্থীরা লাঠি-সোঁটা নিয়ে অবস্থান করেন। পরে উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বাদানুবাদে জড়ান। এর এক পর্যায়ে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, বিভাগের শিক্ষক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। কিন্তু তাদের সামনেই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। তখন আইন বিভাগের কক্ষ ও নামফলক ভেঙে ফেলা হয়।
এ সময় ৩-৪ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতে সেনাবাহিনীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন এবং উভয় বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। পরে তার অনুরোধে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
রজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. মাফরুহা সিদ্দিকী জানিয়েছেন, প্রায় ৮/১০ জনের মতো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
এসএস/এমএম