ফেনী: ফেনীতে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদসহ পরিষদের বিভিন্ন সেবা পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে নাগরিকদের।
বেলা ১১টার পরও দরজা খোলা হয় না অনেক পরিষদের। আর খোলা থাকলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসেন নিজের খেয়াল খুশি মতো।
জেলা প্রশাসক বলছেন, সেবা না পাওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। ওইদিন জেলার ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে কয়েকটিতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। ২০ আগস্ট দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। বন্যায় ইউনিয়ন পরিষদগুলো ডুবে যায়। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। বিঘ্ন ঘটে নাগরিক সেবার। পরে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা নিয়ে অভিযোগ জনগণের। সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ, পরিষদে কোনো লোকজনই নেই।
বেলা ১১টায় ফেনী শহরতলীর পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, তখনও সেখানে তালা ঝুলছে। সেবা নিতে আসা ফখরুল ইসলাম নামে একজন জানান, বেলা বয়ে গেলেও পরিষদের কর্তাদের দেখা মেলে না। তারা আসেন-যান নিজের খেয়াল খুশি মতো।
বেলা ১১টার পরও অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা হাজির হন না বলে অভিযোগ সেবা নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তারা জানান, পরিষদের কম্পিউটার নষ্ট থাকায় টাকা দিয়ে বাইর থেকে নাগরিক সনদ প্রিন্ট করে নিতে হচ্ছে তাদের। এরপরও স্বাক্ষরের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর কিছু পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার বন্ধ থাকায় বাইরের দোকানে চলছে পরিষদের কাজ।
কালিদহ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কথা হয় লিটন নামে একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, সেবা নেওয়ার জন্য মানুষ কষ্ট করছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ অচলাবস্থার অবসান হওয়া দরকার।
কালিদহ ও মোটবী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, সেবা নিতে আসা মানুষ একবার ইউনিয়ন পরিষদে একবার উপজেলা পরিষদে যেতে হচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। তাছাড়া বন্যায় পরিষদের সব ডকুমেন্টস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিঘ্ন হচ্ছে সেবাদানে।
জনবল সংকটের কথা তুলে ধরে পরিষদের প্রশাসক জানান, জনগণের প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, সেবা না পাওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো. বাতেন বলেন, ঠিক প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যায়নি পরিষদগুলোতে, যেহেতু মেয়াদ শেষ হয়নি। তবে স্বাক্ষর ও আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাদের। এ বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চলছে পরিষদগুলো।
ফেনীতে ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২টি, ছাগলনাইয়ায় ৫টি, পরশুরামে ৩টি, ফুলগাজীতে ৬টি, সোনাগাজীতে ৯টি ও দাগনভূঞা উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর ৪০টিতেই নেই চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। শুধু সোনাগাজীর নবাবপুর, দাগনভূঞা সদর ও রামনগরে চেয়ারম্যান রয়েছে।
নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর তার ইউনিয়ন পরিষদে কোনো ধরনের সরকারি বরাদ্দ আসেনি, যার ফলে তিনি পরিষদে থেকেও কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, পরিষদে জন প্রতিনিধিরা না থাকলে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। এ অচলাবস্থার নিরসন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
এসএইচডি/আরবি