বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের পর তার মুক্তি চেয়ে অনুসারীরা নানা কায়দায় আন্দোলন করার চেষ্টা করছে। চট্টগ্রামে তার সমর্থক গোষ্ঠী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। ষড়যন্ত্রকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ফেসবুকে নিজের ভ্যারিফায়েড আইডিতে পোস্ট দিয়ে এসব কথা বলেন সারজিস।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম লিখেছেন- ‘ধর্মকে ‘টুল’ (হাতিয়ার) হিসেবে ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সন্ত্রাসী সংগঠন যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করে তবে সেসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যিনিই জড়িত থাকুক না কেন, খুনের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ষড়যন্ত্রকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় নয়। বেশি ছাড় পেলে মাথায় উঠে নাচবে।
উগ্রপন্থীর বিচার তার ধর্ম দেখে হয় না, উগ্রপন্থীতা দেখে হবে। ’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহও। তিনি লিখেছেন-
‘সারা দেশের সকল সাধারণ জনগণকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আপনারা ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন। নিজেরা আইন হাতে তুলে নিয়ে দয়া করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না।
আমাদের বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। আমরা কোনোভাবেই আমাদের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দিবো না। ৫ই আগস্টের পর থেকেই একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য ক্রমাগত চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। দয়া করে নিজেরা নিজেরা কোন্দলে জড়িয়ে কুচক্রী এই মহলের হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে দিয়েন না।
চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে, বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কোন নির্দিষ্ট সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে সে সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আপনারা শান্ত থাকুন, সতর্ক থাকুন, ধৈর্য ধরুন। ’
চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফ (৩৫) নিহত হন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
একটি সূত্র বলছে, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আদালতে তোলার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তার অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় আলিফকে কোপানো হয়।
ইসকনের সমর্থকরা সাইফুল ইসলাম আলিফের হাত, মাথা, পায়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। চিকিৎসক এ আইনজীবীকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। তার মৃত্যুর বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা সমিতির নেতৃত্বে হাসপাতালে আছি।
এদিকে আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।
এ ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
এমজে