সিলেট: চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে সন্ত্রাসীর হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরাধী ছাত্রআন্দোলন সিলেট ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর শাখা।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে বক্তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলীফের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার এবং ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
অন্যথায় ছাত্রসমাজ আরো একটি যুদ্ধ সংগঠিত করতে প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, আপনারা প্রস্তুত থাকুন, যেকোনো সময় যুদ্ধের ডাক আসতে পারে। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনে আমরা আবার যুদ্ধ ঘোষণা করব।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের ব্যানারে নগরের চৌহাট্টা পয়েন্টে সমাবেশ থেকে দাবি জানিয়ে এমন হুঁশিয়ারি দেন।
এরআগে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চট্রগ্রামে আদালত পাড়ায় নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েরি জানাযা পড়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরের জিন্দাবাজার পয়েন্ট ঘুরে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশ করে।
এছাড়া একই সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে মিছিল বের করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশ করে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে ‘জাতীয় সংহতি সপ্তাহ পালন’ উপলক্ষে জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরীফ মাহমুদ।
মহানগর সেক্রেটারি শাহীন আহমদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, বিশেষ অতিথি ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক সিদ্দিক আহমদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্য কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, জুলাই গণহত্যার সাথে জড়িত সকলের বিচার অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর অনেকের জামিন হচ্ছে যা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, গতকাল চট্টগ্রামে একজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। ছাত্রদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
এদিকে, নগরের চৌহাট্টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সিলেটের নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যখন দেখতে পাই, আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে ইসকন নামক সন্ত্রাসীরা যখন জয় শ্রীরাম বলে স্লোগান দেয়, আমাদের লজ্জাবোধ হওয়া উচিত। আমরা লজ্জিত হচ্ছি, তাদের এই অপকর্মের কারণে।
বক্তারা বলেন, আপনারা ধৈর্যধারণ করুন, আমরা সর্বত্র আমাদের ধৈর্যের পরিক্ষা দিচ্ছি। অবিলম্বে যদি ইসকন সন্ত্রাসীদের এই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা না হয়, এদেশের ছাত্র-জনতা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, এদেশের জনতাদের বাকস্বাধীনতা ফিরে এসেছে। এ দেশের জনতারা এখন মুখ খুলে কথা বলতে পারে। আগামী দিনের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যেসকল কর্মসূচি থাকবে, আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, ‘মঙ্গলবার আদালত চত্বরে আমার ভাইকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, তারা মসজিদেও হামলা করেছে। ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন, ইসকন একটি ভারতীয় সংগঠন, ইসকন আওয়ামী লীগের সংগঠন, এরকম সংগঠনকে আমরা বাংলার মাটিতে থাকতে দেব না। ইসকনকে নিষিদ্ধ করে যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ’
এছাড়া কোনো সম্প্রদায়িক দাঙ্গা যদি এই বাংলাদেশে লাগানোর কেউ দুঃসাহস দেখায়, বাংলার ছাত্রসমাজ আবারও আরেকটি ৫ আগস্ট সংগঠিত করতে দ্বিধাবোধ করবে না বলেও উল্লেখ করা হয়।
সনাতনীদের উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই, আপনারা আমাদের ভাই, আমরা আপনাদের ভাই, আপনাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা একটি সম্প্রতির বাংলাদেশ গঠন করতে চাই। কিন্তু সেই সংখ্যালঘুকে যদি কাজে লাগিয়ে বা পুঁজি করে এই বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল বাংলাদেশ তৈরি করতে চায়, তাহলে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ছাত্রশিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
এনইউ/এসএএইচ