সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি খামারে ঢুকে চারজন যুবক বড় আকারের একটি গুরুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারছে।
পাশবিক আচরণের এ বর্বর ঘটনাটিকে বাংলাদেশে ইসকনের গরুর খামারে আক্রমণের দৃশ্য দাবিতে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্কের স্বীকৃতি পাওয়া তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, ইসকনের গরুর খামারে চার যুবক কর্তৃক গরুর ওপর হামলার দৃশ্যটি বাংলাদেশের নয় বরং প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের পাঞ্জাবের একটি গরুর খামারে হামলার পুরোনো দৃশ্য।
ভারতের পাঞ্জাবে গরুর ওপর যুবকদের হামলার দৃশ্যকে বাংলাদেশে ইসকনের গরুর খামারে হামলার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে, ভিনয় কাপুর নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৪ নভেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
ভিনয় কাপুরের পোস্টের ক্যাপশনটি ভাষান্তর করে জানা যায়, জলন্ধর জমশেদ ডেইরিতে কিছু লোক দ্বারা গরুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ভিডিওটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো হয়েছে এবং পুলিশ প্রশাসনকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। যাতে এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পোস্টে নিজেকে শ্রী গোবিন্দ গরু প্রতিরক্ষা দলের সভাপতি ও সর্বভারতীয় শিবসেনা রাষ্ট্রবাদীর পাঞ্জাবের সভাপতি দাবি করা হয়ে ভিনয় কাপুর নামের সেই আইডি থেকে।
এছাড়া, পোস্টে উল্লেখিত স্থানের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে খবরস্তান নামক একটি ওয়েবসাইটে গত ২৭ নভেম্বর ‘Jalandhar: Brutally thrashed on a mute person in a dairy, watching the VIDEO will blow your mind’ (ইংরেজি অনুদিত) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদনে যুক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গরুর ওপর যুবকদের হামলার দৃশ্যটি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের জলন্ধর শহরে জমশেদ ডেইরির।
একই তথ্য পাওয়া গেছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ট্রিবিউনের ওয়েবসাইট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও।
ফ্যাক্টচেকের ভিত্তিতে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সুতরাং ভারতের পাঞ্জাবে গরুর ওপর যুবকদের হামলার দৃশ্যকে বাংলাদেশে ইসকনের গরুর খামারে হামলার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন ও উত্তেজনা চলছে। দেশটির নাগরিকদের কেউ কেউ ও রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
এমন পরিস্থিতির নেপথ্যের কারিগর ভারতের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম ও দেশটির সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।
রিউমর স্ক্যানার বলছে, বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে ভারতের ৪৯ গণমাধ্যম।
এসব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইস্যুতে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি চলছে, যা ভারতের নাগরিকরা গোগ্রাসে গিলছেন ও বিশ্বাস করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৪
এসএএইচ