ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ পৌষ ১৪৩১, ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

র‌্যাব-পুলিশ সেজে ডাকাতি করতেন তারা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪
র‌্যাব-পুলিশ সেজে ডাকাতি করতেন তারা! ডাকাতদলের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ

সিরাজগঞ্জ: র‌্যাব ও পুলিশ সেজে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতে থাকা আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  

তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তল, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, দুটি র‌্যাবের পোশাক, ওয়াকিটকি সেট, ১৭টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়।

এছাড়া একটি ব্যাংক থেকে লুট করা ২৮ লক্ষাধিক টাকার মধ্যে কিছু টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।  

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান।  

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মেসার্স মীর ট্রাভেলস্ নামক ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের মাস্টার এজেন্ট শাখার দুই কর্মীকে র‌্যাব সেজে মাইক্রোবাসে তুলে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লুট করে ডাকাতরা। এ ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম গঠন করা হয়। টানা ১৭ দিন ধরে তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং তিনদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে ১১ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাতিয়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে জীবন পারভেজ রেজা (৪৭), একই গ্রামের মৃত. আব্দুল জলিলের ছেলে বাচ্চু মিয়া (৪৭) ও মৃত তুফান মণ্ডলের ছেলে রবিউল করিম (৪৫), মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার করতল গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে আবজাল মিয়া উজ্জ্বল (৪০), ঝালকাঠির নলছিড়ি থানার জুরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো. জয় (৪০), চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার সাতবাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন মিয়া (৪০), শেরপুরের শ্রীরবদি থানার ধাতুয়া গ্রামের মৃত সৈয়দুল রহমানের ছেলে মো. সুমন (৪৭), পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বড়মাছুয়া গ্রামের শাহাদাত হোসেন (৫৫), জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার মানিকপাড়ার মৃত আনারুলের ছেলে মো. আপেল (৩৬), পাবনার চাটমোহর থানার নবীন পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন সরদারের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৪) এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার ভুটাল হাজিবাড়ি গ্রামের আব্দুল রহিমের ছেলে মোস্তফা কামাল জয় (৪৭)।

জেলা পুলিশ জানায়, ১২ ডিসেম্বর মেসার্স মীর ট্রাভেলস্ নামক ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের মাস্টার এজেন্ট শাখা থেকে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে উল্লাপাড়ার মোহনপুর ডাচ্ বাংলা এজেন্ট আউটলেট ও কয়ড়া ডাচ্ বাংলা আউটলেটে যাচ্ছিলেন কর্মচারী মামুনুর রশিদ ও মো. জোনায়েদ রহমান মিরাজ। তারা মোটরসাইকেলে করে উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজ রোড এলাকায় পৌঁছালে র‌্যাবের পোশাকধারী ডাকাতদলের সদস্যরা মাইক্রোবাস ঠেকিয়ে তাদের পথরোধ করেন। এরপর টাকাসহ তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। একপর্যায়ে মারধর করে ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে দুজনকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের হামকুড়িয়া এলাকায় ফেলে চলে যায় ডাকাতদল। ঘটনার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করা হয়।  

ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও ডাকাতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমানের তত্ত্বাবধানে সহকারী পুলিশ সুপার (কামারখন্দ সার্কেল) মো. আদনান মুস্তাফিজ, সহকারী পুলিশ সুপার (উল্লাপাড়া সার্কেল) পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মো. একরামুল হোসাইনকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম গঠন করেন।  

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডাকাতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর তিনদিন ধরে ঢাকা, গাজীপুর, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন যে তারা র‌্যাব ও পুলিশ পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মো. রবিউল করিম শাহজাদপুর ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে চাকরি করেন। তিনিও ডাকাতদলের সদস্য। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য ডাকাতরা মেসার্স মীর ট্রাভেলস নামক ডাচ্ বাংলা এজেন্ট শাখাকে টার্গেট করে ১২ ডিসেম্বর উল্লাপাড়ায় অবস্থান নেন। ওই দিন সন্ধ্যায় এজেন্ট ব্যাংকের কর্মী মামুন ও মিরাজ টাকা নিয়ে বের হলে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে টাকা রেখে হাত ও চোখ বেঁধে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়।  

ঘটনার সঙ্গে জড়িত মোট ১১ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও  দিয়েছেন, জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান।  

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের নামে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।