ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মর্গের দুই মরদেহের দাবিদার দুই পরিবার, অপেক্ষা ডিএনএ পরীক্ষার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৫
মর্গের দুই মরদেহের দাবিদার দুই পরিবার, অপেক্ষা ডিএনএ পরীক্ষার স্বজনের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে একটি পরিবার

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় নিহত সাতজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পৃথক দুটি পরিবার মরদেহ দেখে দুজনকে শনাক্তের দাবি করেছে।

তবে পুলিশ বলছে, আইন অনুযায়ী ডিএনএ পরীক্ষায় মিল পাওয়া গেলে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

সেলিনা বেগম নামে এক নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার স্বামীর মরদেহ বলে দাবি করেন। তার স্বামীর নাম কাবিল হোসেন। তিনি মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। এছাড়া নুরে আলম নামে আরেক যুবক তার ভাতিজার মরদেহ শনাক্ত করেন। তার নাম হাসান (২০)।

রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে স্বজনরা যাত্রবাড়ী থেকে নিখোঁজ হাসানের মরদেহ দেখে তার ভাতিজার মরদেহ বলে দাবি করেন চাচা নুরে আলম। এবং গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে ঢামেকের মর্গে সেলিনা বেগম তার স্বামী কাবিলের মরদেহ বলে দাবি করেন।

মর্গের ইনচার্জ রামু দাস বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় এখন পর্যন্ত এক নারীসহ সাতজনের মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। সবগুলো মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। কোনো স্বজন না থাকায় সবগুলো মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে অনেক স্বজনরা মরদেহ শনাক্তের জন্যে আসলেও কেউ শনাক্ত করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, রোববার দুপুরে একটি মরদেহ শনাক্তের দাবি করেন এক স্বজন। গতকাল সন্ধ্যার দিকে মর্গে এসে এক নারী তার স্বামীর মরদেহ বলে দাবি করেন। তাদের থানায় ও সিআইডিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

নিহত হাসানের চাচা নুরে আলম বলেন, তাদের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার কাছিয়া সাহা মাদার গ্রামে। হাসান যাত্রাবাড়ী সুতিখালপাড় বালুর মাঠ এলাকায় থাকতো। গুলিস্তান এরশাদ মার্কেটে একটি ইলেকট্রিক দোকানে কাজ করতো সে।  দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে হাসান ছিল বড়।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট বিককেলে সুতিখালপাড়ের বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর বাসায় ফিরেনি। অনেক হাসপাতালে খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। এক যুবকের পায়ে তার প্যাঁচানো অবস্থায় যাত্রাবাড়ী রাস্তায় পড়ে থাকা একটি ছবি ভাইরাল হয়। সেই ছবিটাই হাসানের মরদেহ ছিল। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এমনকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কয়েকবার এসে ৬টি মরদেহ দেখে গেছি। তবে শনাক্ত করতে পারিনি। দুইদিন আগে ফেসবুকে কয়েকটা ছবি দেখে আবার ঢাকা মেডিকেলে আসি। একটি মরদেহ ভাতিজা হাসানের সঙ্গে মিলে যায়। তবে এরআগে কয়েকবার এসেছি, এ মরদেহটি মানে হাসানেরটা দেখতে পাইনি।

সেলিনা বেগম বলেন, তাদের বাসা মুগদা মানিকনগর এলাকায়। গত ৫ আগস্ট সকালে মানিকনগর বাসা থেকে তার স্বামী কাবিল হোসেন বের হয়। সেই দিনের পর থেকে স্বামী কাবিল হোসেন আর বাসায় ফিরে আসেনি। অনেক জায়গায় খোজাখুজির পর কোথাও পায়নি। ফেসবুকে মাধ্যমে দেখতে পায় বেশকয়েকটি মরদেহ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। এরপর শনিবার সন্ধ্যার দিকে সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে ফ্রিজে থাকা স্বামী কাবিল হোসেনের মতই একটি মরদেহ দেখতে পাই। তবে তার বয়স দেখে একটু মনে হচ্ছে। তবুও আমরা ডিএনএ নমুনা দেবো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলের প্রধান সদস্য নাফিসা ইসলাম সাকাফি বলেন, আন্দোলনে নিহত দুই পরিবার দুটি মরদেহ শনাক্তের দাবি তুলেছে। যেহেতু মরদেহগুলো সরাসরি চেনার কোনো উপায় নেই। তাই স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। আমরা সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হবে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মুনসুর বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় নিহত কয়েকজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। এরমধ্যে ৬টির মরদেহের সুরতহাল শাহবাগ থানা পুলিশ করেছে। একটি মরদেহের সুরতহাল করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। সেলিনা বেগম নামে এক নারী একটি মরদেহ তার স্বামীর বলে দাবি করেন। তবে তার স্বামীর বয়স ও মরদেহটি বয়স অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে ডিএনএ নমুনা দিতে আবেদন করলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাত্রাবাড়ীর অপর একটি মরদেহ শনাক্তের দাবি করেছে স্বজনরা। তাদের যাত্রাবাড়ি থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৫
এজেডএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।