বাগেরহাট: জেলার বিভিন্ন এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা। চোর আতঙ্কে রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গেল সাড়ে ৩ মাসে ২৪টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যায়। যার বেশিরভাগই সদর উপজেলায়। এতে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন কয়েক হাজার গ্রাহক। চুরি যাওয়া ২৪ ট্রান্সফরমারের আর্থিক মূল্য ২০ লক্ষাধিক টাকা। প্রতিটি ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দেওয়া হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সব শেষ গত ১৭ জানুয়ারি ফকিরহাট উপজেলার পাগলা-শ্যামনগর তৈয়ব আলীর বটতলা সংলগ্ন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে কাজী মহিদুল ইসলামের বাড়ির সামনের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমার চুরি হয়। একই রাতে পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর গ্রামেও একটি খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টা করা হয়। চুরি করতে না পেরে খুঁটির নিচে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। যার ফলে দুদিন বিদ্যুৎহীন থাকতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের। পরে নতুন ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দিলে সচল হয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
শুধু ফতেপুর গ্রাম নয়, সদর উপজেলার সৈয়দপুর, দড়িতালুক, মেগনিতলা, চাপাতলা, বাগমারা, বাদোখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে ট্রান্সফরমার বেঁধে রেখেছেন স্থানীয়রা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, চুরি হওয়া এলাকায় নতুন ট্রান্সফরমার লাগানোর জন্য ট্রান্সফরমারের দামের অর্ধেক পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। আর দ্বিতীয়বার চুরি হলে ট্রান্সফরমারের মূল্যের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের, যা দরিদ্র গ্রাহকদের জন্য খুবই কষ্টের। যেকোনো মূল্যে চোর সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন গ্রাহকরা।
ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে বিদ্যুৎহীন থাকা গ্রাহক ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা মিনা নাজমুস সাকিব বলেন, ১৯ জানুয়ারি রাতে আমাদের ট্রান্সফরমারটি চুরি হয়ে যায়। তিনদিনেও আমরা বিদ্যুৎ পাইনি। কারণ ট্রান্সফরমারের মূল দামের অর্ধেক অর্থ্যাৎ ২২ হাজার টাকা আমাদের দিতে হবে। এত টাকা একবারে জোগাড় করা খুবই কষ্টের।
বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, মাঝে মধ্যেই ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। আর চুরি হলেই কয়েকদিন বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়। আবার টাকাও গুনতে হয়। এর থেকে ভোগান্তি আর কিছু নেই।
বাদোখালী এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, চুরি হওয়ার পরে এলাকার ট্রান্সফরমারটি লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। তারপরও চুরি হওয়ার শঙ্কায় রয়েছি। ট্রান্সফরমার থাকে বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপরে, এটা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। চুরি ঠেকাতে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান এ কৃষক।
ট্রান্সফরমার চুরি এড়াতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুশান্ত রায়।
তিনি বলেন, চুরির খবর পাওয়ার পরেই আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার করেছি। এখনও কোনো চোরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে চুরি ঠেকাতে গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা জরুরি।
সুশান্ত রায় বলেন, প্রতিটি চুরির ঘটনা একই রকম। চোররা ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা মূল্যবান তামার তার নিয়ে ধাতব গোল বাক্স ও তেল ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরে তামার তারগুলো ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে খুবই কম টাকায়। ভাঙারির দোকানগুলোতে নজরদারি বাড়াতে পারলে চোর ধরা সম্ভব বলে মনে করেন পল্লী বিদ্যুতের এ শীর্ষ কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। চোরদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। খুব শিগগিরই চোর সিন্ডিকেটকে শনাক্ত ও আটক করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ৫ লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছে। বাগেরহাট সদর উপজেলায় রয়েছে ৬৯ হাজার গ্রাহক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৫
আরবি