যশোর: স্ত্রীকে গামছা দিয়ে বেঁধে নির্যাতন চালাতে থাকেন স্বামী। এসময় তাদের ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বাবার হাত থেকে মাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে আর বলতে থাকে ‘আমার মাকে বেঁধেছ কেন, সে কি চোর?’ তখন পাষণ্ড বাবা মেয়েকে উপর্যুপরি কয়েকটি লাথি মেরে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন স্বামী আনোয়ার হোসেনের মারধরে আহত সেলিনা খাতুন।
সাংবাদিকদের সেলিনা বলেন, ‘আমারে যেভাবে মারেছে তা একটা চোররেও মারে না। মারতি মারতি আমার শরীল থেঁতলায়ে দেছে’।
সেলিনা হোসেনের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। তিনি ললিতাদহ গ্রামের মৃত ফয়েজ আহম্মদের মেয়ে। প্রায় ১৬ বছর আগে রসুলপুরের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। মালয়েশিয়া ফেরত আনোয়ার বর্তমানে কৃষিজীবী।
সেলিনা জানান, মঙ্গলবার ভোর ছয়টার দিকে আকস্মিকভাবে আনোয়ার তার ওপর হামলে পড়েন। তিনি সেলিনাকে গামছা দিয়ে বেঁধে নির্যাতন চালাতে থাকেন।
সেলিনা বাঁধন খুলে ফেললে পরে আনোয়ার বাইরে থেকে ওড়না নিয়ে এসে তাকে ফের শক্ত করে বাঁধেন। একইসঙ্গে ঘরে থাকা দড়ি দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে চালাতে থাকেন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন।
সেলিনা জানান, নির্যাতনের সময় স্বামী আনোয়ার ওড়না আর দড়ি দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে নিয়েছিলেন যাতে তিনি আত্মরক্ষা করতে না পারেন। প্রথমে ঝাঁটা দিয়ে ১৫-২০টি বাড়ি মারেন আনোয়ার। এরপর বাইরে থেকে মেহগনি গাছের বাটাম (লাঠি) নিয়ে এসে এলোপাতাড়ি পেটান।
এসময় তাদের মেয়ে মাকে রক্ষায় ঠেকাতে গেলে তাকেও মারধর করেন আনোয়ার।
এক পর্যায়ের মায়ের চিৎকার সইতে না পেরে মেয়ে বাইরে বের হয়ে এলাকাবাসীকে ডাকতে থাকে। এলাকার লোকজন ছুটে এসে দেখেন মারধরের পর হাত-পা বাঁধা সেলিনাকে বাড়ির উঠানে ফেলে রাখা হয়েছে। এসময় তিনি চিৎকার করছিলেন।
এরপর এলাকাবাসী সেলিনার মাকে ফোন করলে তিনি মেয়েকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেলিনার মা রোকেয়া খাতুন জানান, বিয়ের সময় স্বামী আনোয়ার হোসেন তাদের কাছ থেকে যৌতুক নিয়েছিলেন। এরপর প্রায় নয় বছর আগে তিনি মালয়েশিয়াতে যান। সেসময়ও তাকে ধার হিসেবে টাকা দিতে হয়েছিল। কিন্তু, মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এলেও সেই টাকা শোধ করেননি আনোয়ার। উপরন্তু, বাড়ি করার জন্য আরও টাকা আদায় করেন তাদের কাছ থেকে। এতকিছু দেওয়ার পরও স্বামীর মন পায়নি সেলিনা। কারণে-অকারণে প্রায়ই গালিগালাজ আর মারধর করত স্ত্রীকে।
সেলিনার অভিযোগ, প্রায় আট বছর থেকে আনোয়ার তাকে ও তার দুই ছেলেমেয়েকে কোনো জামাকাপড় দেন না। এমনকি তাদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রও দেন না। বাধ্য হয়ে সেলিনাকে অন্যের বাড়িতে কাজ নিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া ও অন্যান্য চাহিদা মেটাতে হয়।
তিনি বলেন, ‘আট বছর হলো নতুন কাপড় কি তা আমি আর আমার ছেলেমেয়েরা দেখিনি। মানুষের বাড়ি থেকে চায়ে-চিন্তে পুরনো যা পাই তাই ব্যবহার করি আমরা’।
তিনি আনোয়ার হোসেনের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
এদিকে, মেয়ের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে মা রোকেয়া খাতুন বুধবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় আনোয়ারের মা, বাবা ও বোনকেও আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন পলাতক রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
এসএএইচ