বগুড়া: ৪০ হাজার অটোরিকশা আর সড়ক দখল করে দোকান বসানো, যানবাহন পার্কিংয়ের কারণে হেঁটেও চলাচল করা মুশকিল হয়ে পড়েছে বগুড়া শহরে।
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শুরু হয় শহরে সড়ক দখলের প্রতিযোগিতা।
শহরের কাঁঠালতলা মোড়ে ২০ ফুট প্রশস্ত সড়কের পুরোটাই দখল করে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ফলের বাজার। অবৈধভাবে বসানো এসব বাজারে সকাল থেকেই শুরু হয় বেচাকেনা, চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। শহরের বড়গোলা থেকে কাঁঠালতলা পর্যন্ত সড়কটি সকাল থেকে দখল করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মালামাল ওঠানো-নামানো হয়। এছাড়া শহরের নিউ মার্কেট, কাঁঠালতলা, থানা রোড, ফতেহ আলী বাজার, সাতমাথা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট ও সড়কের পাশের ফুটপাতগুলোতে দোকানের সামনের রাস্তায় প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ছোট ছোট দোকান বসার সুযোগ দিয়ে থাকেন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে এমন দোকান বসানোর কারণে শহরে আসা লোকজন ছাড়াও পথচারীদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।
বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪০ হাজার অটোরিকশা। যার কোনো বৈধতা নেই। অবৈধ হওয়ার কারণে গত ১৫ বছরেও এসব অটোরিকশাকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। পৌরসভা থেকে পায়েচালিত রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হলেও শহরে কেউ এমন রিকশার লাইসেন্স করতে আসে না।
বগুড়া পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আব্দুল হাই বলেন, বগুড়া পৌরসভা থেকে পায়েচালিত (প্যাডেল) রিকশার লাইসেন্স দেওয়া ছিল ছয় হাজার ৩৬৩টি। ২০১৯ সালের পর থেকে কেউ প্যাডেলের রিকশার লাইসেন্স নবায়ন করতে আসেনি।
এদিকে তীব্র যানজটে প্রতিদিনই স্থবির হচ্ছে শহরের জনজীবন। বগুড়া শহরের সব কার্যক্রম সাতমাথা কেন্দ্রিক হওয়ায় এবং অবৈধ পার্কিং, রাস্তার দু’পাশে বসা দোকানের কারণে যানজট লেগেই থাকে শহরে। এর সঙ্গে যোগ হয় ট্রেন চলাচলের সময় রেলগেট বন্ধ হওয়া। শহরের মাঝখান দিয়ে রেললাইন থাকায় ট্রেন চলাচলের সময় রেলগেট বন্ধ রাখায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়ে ব্যস্ত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টারও বেশি সময় চলে যায়। এমনকি, ফুটপাত দখল করে বসা দোকানিদের কারণে হেঁটেও গন্তব্যে পৌঁছাতে স্বস্তি নেই এ শহরে।
তবে ট্রাফিক বিভাগ বলছে, যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে পুলিশও পৌরসভায় কাজ শুরু করেছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মঙ্গলবার থেকে শহরে অভিযান শুরু হয়েছে।
বগুড়া ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে ৮৪ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ছুটি এবং অফিসের কাজের কারনে ৭০ জনকে কাজে লাগানো যায়। ৭০ জন দুই শিফটে কাজ করেন প্রতিদিন। এতো বড় শহরে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে ৭০ জন ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে জেলা পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার। তবে যানজট কমাতে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ থেকে ছয় হাজার রিকশা চলাচলের উপযোগী বগুড়া শহরে। সেখানে ছোট বড় অটোরিকশা চলাচল করে ৪০ হাজার। পাশাপাশি ফুটপাত দখল, সড়ক দখল করে দোকান বসানো, যানবাহন পার্ক করাও যানজটের অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
এসআই