ঢাকা, শনিবার, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফুলের তোড়া হাতে নার্স ড. ইউনূসকে বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রী এটা জানতাম না’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
ফুলের তোড়া হাতে নার্স ড. ইউনূসকে বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রী এটা জানতাম না’ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। হাসপাতালের বেডে শুয়েই  মুঠোফোনে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের খবর রাখতেন।

৫ আগস্টে শেখ হাসিনার ভারতে পলায়ন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফোনকলে যোগাযোগ করে ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দেন শিক্ষার্থীরা।

সেই প্রস্তাবের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আরও ২৪ ঘণ্টা ভাবতে বলেন ড. ইউনূস। পরে দ্বিতীয় ফোনকলে, রাজি হন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।  আর এরই মধ্যে হাসপাতালের একজন নার্স ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে অভিনন্দন জানান ড. ইউনূসকে। তিনি বিস্মিত হলে ওই নার্স তাকে বলেন, “আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’, আমরা এটা জানতাম না। ”

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার আগে-পরের ঘটনা বিস্তারিত জানান ড. ইউনূস। সেখানেই এসব কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস।  

‘রাখমান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্ট অনুষ্ঠানে কথোপকথন লিখিত আকারে বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়।

সেখানে ড. ইউনূসকে বলতে শোনা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব প্রথমে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি তাদের বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না। ’ তারা বলছিল, “না, না, না, আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কাউকে পাইনি। ” 

এ সময় হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। তখন ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে অন্য কাউকে প্রধান উপদেষ্টা করা যায় কি না পরামর্শ দেন তিনি।

পরে শিক্ষার্থীদের তাকে আবার ফোন করে বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে। ’

শিক্ষার্থীদের একরকম জোরাজুরিতেই রাজি হন ড. ইউনূস। তিনি তাদের বলেন, ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। আর এটাই সেই সময়। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তারা আর কোনো কথা বলেনি। ’

সেই দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ঘণ্টা দুয়েক পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন। তিনি আমাকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন ওই নার্স বললেন, “আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’, আমরা এটা জানতাম না। ” আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, “সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’। ” আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা জানলাম। ’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এরও ঘণ্টা দুয়েক পর ওই বোর্ড সদস্যরাসহ হাসপাতালের প্রধান আসেন। তারা ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আমাকে শুভেচ্ছা জানান। সঙ্গে এটাও বলেন যে বিকেলের আগে আমাকে হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হবে না। ’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি পরিচালককে বলি, ওরা আমাকে চাইছে। দেশে যেতে বলছে। ভ্রমণের জন্য আপনি কি আমাকে প্রস্তুত করে দিতে পারেন? তিনি বললেন, “অবশ্যই, আপনার কথা আমাদের মানতে হবে। আপনি একজন প্রধানমন্ত্রী। আপনার নিরাপদ যাত্রার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেব। প্রয়োজনীয় ওষুধসহ সবকিছু দেব। সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকব। ”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এর কয়েক ঘণ্টা পর, সকালে ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল আমাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে আসে। এটাই ছিল দেশে ফেরার আগের ঘটনাবলি।  

আরও পড়ুন>> প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার পর কী হয়েছিল, জানালেন ড. ইউনূস

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।