ঢাকা: দিন দিন আমাদের বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। তাই স্কুল জীবন থেকেই সংস্কৃতি ও লাইব্রেরির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে ‘সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার বিনির্মাণে আমাদের করণীয়’ বিষয়ে এবং গ্রন্থাগার দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্বের ওপর এক বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ দেশব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘সমৃদ্ধ হোক গ্রন্থাগার এই আমাদের অঙ্গীকার। ’ জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকাকে দৃঢ় করাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের লক্ষ্য।
উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দিন দিন আমাদের বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। কারণ এখন আর লাইব্রেরিতে তেমন যাওয়া হয় না। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কি করছে, তার প্রতিক্রিয়া কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পড়ে। আবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কি করছে সেটা আবার জানতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমনটা চলতেই থাকবে। আমাদের স্কুল জীবন থেকে লাইব্রেরিতে যাওয়ার অভ্যাসটা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমগুলোতে অংশ নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে দিবসগুলো হয় সেগুলোতে আনুষ্ঠানিকতা থাকে, এসব আনুষ্ঠানিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমি চাই আগামী বছর থেকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস এমন হবে মঞ্চে কেউ বসে থাকবে না, বক্তৃতা দেবে না। আমাদের জাতীয় পাবলিক লাইব্রেরি ও সারা দেশের লাইব্রেরিগুলো বই পড়ার প্রতিযোগিতা ও বই নিয়ে আলোচনাসহ বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এছাড়া এ দিবসকে কেন্দ্র করে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। আমার বিশ্বাস এখানে যারা বসে আছেন তারা কেউ ক্রোড়পত্র পড়েনি। এই ক্রোড়পত্র প্রকাশ শুধু অর্থনৈতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আমার একটাই চাওয়া তোমরা জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের যে প্রামাণ্য চিত্র দেখলে সেটা হৃদয়ে ধারণ করবে। আজকের তরুণ কি করতে পারে সেটা তারা দেখিয়ে দিয়েছে। এখানে পেছনে যারা বসে আছে তারা প্রত্যেকেই জুলাই আগস্টের শহীদের সমবয়সী। তোমাদের ভূমিকা এ দেশে বা সমাজে কত বড় যে তোমরা মানুষকে আরেকবার স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছ। যেটা আমরা পারি নাই।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম।
সভায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আলম। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমাসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রসঙ্গত, দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারসমূহে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসন, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি, বাংলাদেশ গ্রন্থাগারিক ও তথ্যায়নবিদ সমিতি, বেসরকারি গণগ্রন্থাগার সমিতি, বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পেশাজীবী, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একযোগে দিবসটি পালন করে। ঢাকার বাইরে সব জেলায় স্থানীয় জেলা প্রশাসন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচি অনুযায়ী দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৫
জিসিজি/আরআইএস