ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

দেশি-বিদেশি মিডিয়া নিয়ে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫
দেশি-বিদেশি মিডিয়া নিয়ে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

ঢাকা: দেশি-বিদেশি মিডিয়া নিয়ে খুব শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

প্রেস উইং জানায়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, প্রধান উপদেষ্টা যত দ্রুত সম্ভব ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন। দেশি-বিদেশি মিডিয়া উনার সঙ্গে থাকবেন।
 
রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য পরিবহন, ব্যাপকহারে আমদানি ও সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে এ সভায় আলোচনা হয়েছে।

সভায় রমজানে লোডশেডিং না রাখা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে আলোচনা হয় বলেও জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।  

আয়নাঘর কী?

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (সিটিআইবি) পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম হলো আয়নাঘর। ধারণা করা হয়, এখানে (আয়নাঘর) কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ আছে, যেখানে একসঙ্গে ৩০ বন্দি রাখার সক্ষমতা রয়েছে।

গুমের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা লুকাতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ৫ আগস্টের পর ‘আয়নাঘরের’ প্রমাণাদি নষ্ট করেছে বলে জানিয়েছে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন।

চলতি বছর ২০ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রকাশিত গুম কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অংশে এ তথ্য জানা গেছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন ২৬ সেপ্টেম্বর ডিজিএফআই কার্যালয়ের ভেতরে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) পরিদর্শন করে। এই সেলই ‘আয়নাঘর’ বলে পরিচিতি পায়।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্টের পর ডিজিএফআই সদর দপ্তরে ইন্টারোগেশন সেলের কাঠামোগত আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছে, দেয়ালে রং করা হয়েছে, যেখানে বন্দিরা অনেক কিছু লিখেছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু প্রমাণ আমাদের (গুম তদন্ত কমিশন) পরিদর্শনের আগের দিনই নষ্ট করা হয়। পরিদর্শনের কথা জানানোর পরও আমরা পরিদর্শনের সময় দেয়ালে কাঁচা রং দেখতে পেয়েছি। ভেজা রং এবং অসম্পূর্ণ কাঠামোগত পরিবর্তন স্পষ্টই তাড়াহুড়ো করে অপরাধ গোপনের চেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

গুম তদন্ত কমিশন যখন ডিজিএফআই কার্যালয় পরিদর্শন করে তখন মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। পরে ১৭ অক্টোবর তাকে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তৎকালীন ডিজি শক্ত যুক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি তার মেয়াদের আগে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। প্রমাণ নষ্টের ক্ষেত্রে তার এমন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দায়মুক্তির সংস্কৃতির জবরদস্তিমূলক ক্ষমতার প্রকাশ।  

আগেকার অপরাধীদের রক্ষা করার জন্য তার এমন উদ্যোগ ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং পেশাগত সততার বিরুদ্ধে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে তাদের বেশিরভাগই নিজেদের অপরাধের জন্য কখনো জবাবদিহি করবেন বলে আশা করেননি। তারা অপরাধকে অপরাধ হিসেবেও দেখেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রমাণ নষ্ট করার এবং অসহযোগিতার এমন ধরন শুধু ডিজিএফআই নয়, অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলো গত ১৫ বছর ব্যবহার করেছে। এটি শুধু ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিলেন এবং নিজেদের অপরাধ লুকাতে চেয়েছিলেন তারাই নন, পরবর্তীতে যারা বিভিন্ন শীর্ষপদে বসেছেন তারাও করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৫
এমইউএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।