বরিশাল: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর কার্বন বা অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি পেলে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাবে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ে এটি নির্মিত হবে। যেখানে ২৪ ঘণ্টা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধানক্ষেত থেকে কতটুকু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয় তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে স্বয়ংক্রিয়তার পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যা দিয়ে আগামীর কৃষি ব্যবস্থাপনায় দেশে ধান চাষের আধুনিক নিয়মনীতি নির্ধারণ করা হতে পারে।
ব্রির বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ল্যাব ২৪ ঘণ্টা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধানের ক্ষেত থেকে কতটুকু মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড জাতীয় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে তার তথ্য সংগ্রহ করছে এবং নিজে নিজেই সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করছে। অটোমেটিকের পাশেই ব্রির বিজ্ঞানীরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও সাতদিন অন্তর অন্তর তথ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করছেন।
এই গবেষণার ফলাফলের তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধান উৎপাদনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
ব্রির প্রধান কার্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত ড. এস এম মফিজুল ইসলাম সার্বিক বিষয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাপমাত্রাই মূলত দায়ী। আর কার্বন নির্গমন বাড়লে তাপমাত্রা বাড়ে। ধান চাষাবাদ করলে কি পরিমাণ কার্বন নির্গমন হয় এবং কোন পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ করলে এ নির্গমন আমরা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে পারব অথবা কমাতে পারব তার একটা উদ্দেশ্য নিয়েই এই ল্যাব স্থাপন।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রিনহাউজ গ্যাস পরিমাপ পরীক্ষাগার বসানো হয়েছে। তবে বরিশালে ২৪ ঘণ্টা স্বয়ংক্রিয় পরিমাপ ব্যবস্থা সারা বাংলাদেশেই প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) ফান্ডে এবং আন্তর্জাতিক সার উন্নয়ন কেন্দ্রের (আইএফডিসি) সহায়তায় বসানো এ ল্যাবে ধানের মাঠ থেকে মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাসের পরিমাপ করা হচ্ছে।
ড. এস এম মফিজুল ইসলাম বলেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিমাপে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত গেল আমন মৌসুম সম্পন্ন করা হয়েছে এখন বোরো মৌসুমের কাজ করা হচ্ছে। এখানে ‘অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং (এ.ডব্লিউ.ডি)’ বা ভেজা ও শুকানো দুটি পদ্ধতির মধ্যে কোন পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে কার্বন নির্গমন কম হয় সেটাও দেখা হচ্ছে। আবার মাটির নিচে গুটি ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সার দিলে কার্বন নির্গমন কেমন হয় সেটাও দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে বর্তমানে অটোমেটিকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান ঠিক রেখে ম্যানুয়াল মেজারমেন্টও করা হচ্ছে। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী সরকারকে অবহিত করা হবে কোন পদ্ধতিতে ধান চাষ করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রোপাগান্ডা আছে ধান চাষাবাদ প্রচুর মিথেন নির্গমন করে, সেটাও আমরা দেখতে চাচ্ছি। আর নির্গমন হলে কমানোর কি কি পথ আছে সেগুলো এই গবেষণা থেকে বের করা হবে। প্রথম দফার ফলাফল এখনও প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তবে সত্যিকারের দৃশ্য বোরো মৌসুম শেষ হলে বোঝা যাবে।
গবেষণা ৫ বছরের হলেও বর্তমান আমেরিকার বর্তমান সরকারপ্রধান বাংলাদেশে ইউএসআইডির সমস্ত ফান্ড বন্ধ করার কথা বলেছেন। সেক্ষেত্রে গবেষণা কতদিন চলবে বা আদৌ চলবে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে।
কিন্তু এটা বাংলাদেশের জন্য দরকার জানিয়ে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ বাংলাদেশকে নিয়ে ২০২১ সালে রিপোর্ট পাবলিশ করেছিল যে- বাংলাদেশ হিউজ মিথেন নির্গমন করে। আর ডাটা না থাকলে আমরা আদৌ এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমরা আদৌ করি কিনা কিংবা করলে কতটুকু করি সেটা জানা প্রয়োজন। তবে কৃষি থেকে নির্গমন খুবই কম হয় এবং ধান থেকে আরও কম। আর যেটুকু হয় তার প্রায় সমপরিমাণ কার্বন ধানগাছ তাদের খাবারের জন্য গ্রহণ করে।
এই কর্মকর্তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধান চাষাবাদ দায়ী নয়। আর বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ দায়ী নয়।
অপরদিকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহম্মদ আশিক ইকবাল খান বলেন, সারাবিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাসের ইফেক্টের কথা প্রতিনিয়ত জোরালোভাবে বলা হচ্ছে। কারণ এর ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আগে যেমন শীত লম্বা ছিল- কিন্তু এখন অল্প কয়েকদিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটার ইফেক্ট মূলত গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে। গ্রিনহাউজ গ্যাস হচ্ছে মূলত মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড মিলিয়ে তৈরি হওয়া গ্যাস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব থেকে বেশি অঞ্চলে ধান চাষাবাদ হয়, তাই আমরা দেখতে চাচ্ছি ধান চাষ কতটা গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয়। ধানচাষে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা সেটার তথ্য না থাকায় এ গবেষণা। এর আগে ধান গবেষণায় ছোট ছোট কিছু কাজ হলেও বড় আকারে মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে গবেষণা প্রথম অটোমেটিক পদ্ধতিতে হচ্ছে বরিশালে। যদিও বর্তমানে সাতক্ষীরাতে ধানের ওপর, গাজীপুরে সবজির ওপরেও একইভাবে ল্যাব স্থাপন করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে ম্যানুয়ালি হয়ত গাজীপুরে এর আগে করা হয়েছে।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধান চাষে সার দেওয়াসহ অন্যান্য জিনিস ব্যবহারে যতটুকু কার্বন নির্গত হয়, তা গাছ শোষণ করছে। আমার মতে, দিনশেষে হিসেবটা শূন্যই থাকছে। তবে বিস্তর গবেষণা শেষ হলে সঠিকভাবে বলা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৫
এমএস/এসএএইচ