ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত করবো না: সারজিস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত করবো না: সারজিস

নারায়ণগঞ্জ: জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি মনে করে ডিসেম্বর, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। আমরা দ্বিমত করবো না।

কিন্তু স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ও স্বচ্ছ হতে হবে। এতে যদি কোনো দল তিনশ আসনও পায় আমাদের আপত্তি থাকবে না। কিন্তু এই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে এ নির্বাচন হতে হবে।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সোনারগাঁয়ে "আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ" শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক হয়েছে। সেখানে নির্বাচনের সময়ের কথা বলা হয়েছে ডিসেম্বর অথবা পরবর্তী বছরের কয়েক মাসের মধ্যে। আমরা বলতে চাই আমরা ক্ষমতামুখী না। পাঁচ আগস্ট যদি ছাত্র জনতা বলত আমরাই সরকর গঠন করবো, বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের আমাদের বাইরে গিয়ে কথা বলার সাহস ছিল না। কিন্তু আমরা পাঁচ আগস্ট বিজয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি সবার মতামতের ভিত্তিতে এই উপদেষ্টা মণ্ডলী হয়েছে।

আমাদের মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দেশের স্বার্থে আমদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই। আমাদের পদ বাংলাদেশের আগামী নির্ধারণ করবে না। আমাদের কাজ নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল ছিল। কিন্তু হাসিনা ছাত্র জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। শেখ হাসিনা ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। হাসিনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে। হাসিনা নিজে তার পরিবার নিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু যাদেরকে নেতাকর্মী হিসেবে মাঠ পর্যায় থেকে সারাদেশে ব্যাবহার করেছে তাদের টিস্যুর মত ব্যাবহার করে ফেলে পালিয়ে গেছে ৷ এসকল নেতাকর্মী থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে।

আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কোন নেতা বা নেত্রীর পেছনে ছুটবেন ৷ আগামীর বাংলাদেশে আপনার অবস্থান কোথায় হবে। বিগত ১৬ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা ছিল যাদের এত বছর আপনারা দেখা পাননি। এখন তারা এসে আপনাদের মাথায় হাত বোলাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রয়োজনে যাদের পাননি এখন সুসময়ে তাদের নেতা মেনে নেয়ার মানসিকতা দেখাবেন না।

আমরা নাহিদ ইসলামকে আহ্বান জানিয়েছি আমরা যেন আবারও রাজপথে সারা বাংলাদেশে সংগঠিত করতে পারি সেজন্য ওই মন্ত্রণালয়ের পদ ছেড়ে আবারও সে যেন জনতার কাতারে এসে দাঁড়ায়।

বিগত ১৬ বছরে যে চর্চা ছিল এখন তা আবারও নতুন করে দেখছি। এ চর্চা যারা করে এসেছে এটা তাদের রক্তে মিশে গেছে। পুরো বাংলাদেশে এ অভ্যুত্থানে যারা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, আগামীর বাংলাদেশেও তাদের সামনের সারিতেই থাকতে হবে। যদি আপনারা সামনের সারিতে না থাকেন তাহলে সুবিধাবাদী ও অযোগ্যরা আপনার জায়গা নিয়ে নিবে। এগুলো বন্ধ করতে চাইলে আপনাদের সামনের কাতারে থাকতে হবে।

পাঁচ আগস্টে আমরা পাঁচ কোটি মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিলাম। আমরা সৎ পথে থাকলে হয়ত লড়াইটা দীর্ঘ হবে, কিন্তু এ লড়াইয়ে বিজয় নিশ্চিত। আপনারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করুন। রাজনৈতিক দলগুল কর্মীদের কাজের ব্যাবস্থা করেনি। তাই তারা বাধ্য হয়ে হাত বাড়িয়েছে। প্রথম দশ হাজার টাকা চাঁদা তুলত, পরে হয়ত সেই দশ কোটি টাকা চাঁদা তুলবে। আপনারা ব্যাবসা করুন যেন আপনাদের পরিবার চলতে পারে। পেটের চিন্তা থাকলে রাজনীতি হবে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে ছিল তারা টাকার আশায় এখন আবার ফ্যাসিস্টদের দোসরদের প্রশ্রয় দিচ্ছে।

অনেকেই আছে যাদের শেল্টার দেয়ার জন্য পেছনে অনেক খারাপ লোক আছে। আমাদের কোনো শেল্টারের দরকার নেই। এক হাজার সহকর্মী এক হতে পারলে আপনাদের কোনো ছাতা দরকার নেই। এই সোনারগাঁকে আপনাদের রক্ষা করতে হবে।

কোনো নেতাকে অন্ধ অনুকরণ করবেন না। নয়ত আরেকটা টুঙ্গিপাড়া হবে। যেকোন রাজনৈতিক দল হোক, আপনার দলও হোক। সে যদি অন্যায় করে সেটার আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করবেন।

হাসিনা তার দোসর ও প্রশাসনের কিছু সদস্য আমাদের বাংলাদেশের একজন আলেমকে এখানে অপদস্ত করেছিল। হাসিনা নিজেকে সবার উপরে মনে করেছিল। তার উপরেও যে একজন আছে সেটা হাসিনা ভুলে গিয়েছিল। একটা মানুষ মুখে চুন কালি মেখে দেশ ছাড়লে যে অবস্থা হয় তার অবস্থা তারচেয়ে খারাপ হয়েছে।

কোনো নোংরা, তোষামোদির রাজনীতি আমরা যেন না করি। যোগ্যদের অতিক্রম করতে পারবেন যদি আপনি তারচেয়ে যোগ্য হতে পারেন। ল্যাং মারার রাজনীতি চলবে না। আমাদের নিজেদের আগে যোগ্য হতে হবে। নেতৃত্বের ক্ষমতাকে শানিত করতে হবে। কর্মীদের কথা শোনার ও জবাবদিহিতা করার মানসিকতা থাকতে হবে।

জনগণের জন্য কাজ করাকে আমরা যেন লুটপাটের কেন্দ্র না মনে করি। আমাদের লড়াই একটা ধাপ অতিক্রম করেছে। দ্বিতীয় ধাপ মাত্র শুরু। ৫৩ বছরে এ দেশটা অপর ধাপে যেতে পারেনি। এ ধাপ অতিক্রম করতে কমপক্ষে দশ বছর ফাইট করার মানসিকতা থাকতে হবে। যারা এ মানসিকতা নিয়ে লেগে থাকবে। পাঁচ বা দশ বছর পর আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আপনারা পৌঁছাবেন।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যে শক্তিগুলো ছিল তাদের বলতে চাই খুনী হাসিনা ও তার দোসররা বিগত ১৬ বছরে আপনাদের নানা ভাবে নির্যাতন করেছে। আজ যদি কোন স্বার্থে আপনারা তাদের সহযোগী হন। আজ লিখে দিতে পারি, শুধু সময়ের পরিবর্তন হবে। সেই একই অবস্থা আপনাদের হবে। দয়া করে সেই স্মৃতিগুলো মনে রাখুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
এমআরপি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।