ঢাকা: খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলার ঘটনায় ছাত্রদলকে জালিম (অত্যাচারী) না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, যদি আবার ক্যাডার পলিটিক্স করতে চান, হল দখল, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি করতে চান, আপনাদের পরিণতি হবে সাদ্দাম ইনানের মতো।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রে উত্তোরণের এই লড়াই আমাদের সমন্বিত লড়াই।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলকে দায়ী করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। অন্যদিকে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা ঘটেছে দাবি করে ডাচ চত্বরে বিক্ষোভ করেছে ঢাবি শাখা ছাত্রদল।
সমাবেশে হাসনাত বলেন, আপনারা গত ১৬ বছরে নির্যাতনের কথা ভুলে যাইয়েন না। এই চাপাতির রাজনীতি ক্যাম্পাসে আবার রিইনস্টল করতে চাইলে ছাত্রলীগ গেছে যে পথে, আপনারা যাবেন সেপথে। গত ১৬ বছরে যে নির্যাতন হয়েছে, আপনারা মজলুম ছিলেন আপনারা জালিম হয়েন না। মজলুম জালিম হলে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়।
হাসনাত বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মান জানাই। একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, আবার যারা ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে চাইবে, শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে তাদের পরিণতি ছাত্রলীগের মতই হবে।
গেস্টরুম চাঁদাবাজির স্বপ্ন আর বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হবে না জানিয়ে হাসনাত বলেন, শিক্ষাঙ্গনে মুক্তচিন্তা মনস্তাত্ত্বিক সমৃদ্ধির রাস্তা আমরা সুপ্রশস্ত করেছি, আমরা চাই না কোনো ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের টুঁটি চেপে ধরুক। হলগুলো হবে শিক্ষার্থীদের অবারিত বিচরণের ক্ষেত্র। গেস্টরুম চাঁদাবাজি রিইনস্টল করার স্বপ্ন আর বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হবে না।
সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আপনাদের কাছে শহীদরা একটি সংখ্যা মাত্র। তারা যে স্বপ্নের কারণে জীবন দিয়েছে, আপনারা রক্ত দিয়ে তা মুছে দিতে চাইছেন। জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো দখলদারিত্বের ঠাই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ছাত্ররাজনীতির দরকার আছে। তেমনি শিক্ষার্থীদের কনসার্ন নিয়ে কাজ করতে হবে। জোরজবরদস্তি করে রাজনীতি খাওয়ানোর চেষ্টা করে, তাদের পরিণতি ছাত্রলীগের মতো হবে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ তো অনেক পরাক্রমশালী ছিল, তাদের আমরা ঝেটিয়ে বিদায় করেছি, ছাত্রদল তো গতকাল সকালে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে। আমরা ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছি, তারা যদি আবার শিক্ষার্থীদের ওপর হাত দিতে চায়, আমরা তাদের প্রতিরোধ করব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি এখনো বহাল আছে। লাঠি-স্টাম্প-রামদার রাজনীতি এখনো বহাল আছে। হামলা করার পর নিজেদের ভুল শিকার না করে কুরাজনীতি করার সংস্কৃতি এখনো রয়ে গেছে। ৩ আগস্ট আমরা ফ্যাসিবাদী রাজনীতির কাঠামো উতখাত করার যে শপথ করেছিলাম। যারা বাংলাদেশে স্টাম্প-রামদার রাজনীতি করবে, আমরা তাদের তাড়িয়ে ছাড়ব।
ছাত্রদলের কর্মসূচিকে উদ্দেশ্য করে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, যারা কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তারা এখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) নাটক করতে এসেছে। আমরা এই নাটক দেখতে চাই না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি, যারা হামলা করেছে, তাদের যেন গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রদলের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা যোগ দেয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯,২০২৫
এফএইচ/এএটি