ঢাকা, শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

গোপালগঞ্জে পিআইও, চেয়ারম্যানসহ তিনজনের নামে দুদকের মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
গোপালগঞ্জে পিআইও, চেয়ারম্যানসহ তিনজনের নামে দুদকের মামলা

গোপালগঞ্জে মাটির রাস্তার কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (‌পিআইও), ইউপি চেয়ারম‌্যানসহ তিনজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীত দমন কমিশন (দুদক)।  

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

 

এ মামলায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম (বর্তমানে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় কর্মরত), টু‌ঙ্গিপাড়া উপ‌জেলার ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী আহম্মেদ শেখ ও ডুমুরিয়া ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার কবির তালুকদারকে আসামি করা হয়েছে।

গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দের ২১ ও ২৬ নম্বর প্রকল্পের কাজ  শ্রমিকদের দিয়ে করানো হয়নি। (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির  নীতিমালা ভঙ্গ করে ড্রেজার দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ভুয়া মাস্টাররোল সৃজন করে এ প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া  ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সাময়িক  আত্মসাতের  অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।  

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দে বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার  টাকা ব্যয়ে ২১ নম্বর প্রকল্প “চর গোপালপুর ওয়াপদা রাস্তা  থেকে পাতিলঝাপা অনন্ত বৈদ্যর বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি বৈদ্যবাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিংকরণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে বলে দেখানো হয়।

বিগত বছরের ৩ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হয়। মাস্টাররোল করে ১ম বিল বাবদ ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৫  টাকার বিল উত্তোলন করা হয়। ১৩ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিকে দিয়ে কাজ করিয়ে মাস্টাররোল সম্পন্ন করা হয়। ২য়  বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫শ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়। ১৮ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৫৯০ জন শ্রমিক কাজ করেছে দেখিয়ে মাস্টাররোলের মাধ্যমে ৩য় ও চূড়ান্ত বিল বাবদ ৬৮ হাজার ৬২ হাজার ৫শ টাকাসহ সর্বমোট ২ কো‌টি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ২৪ জুন উত্তোলন করা হয়। ওই টাকা উত্তোলন করা হলেও ৫০ লাখ  টাকার প্যালাসাইডিং কাজের মধ্যে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকার কাজ না করায় ওই টাকা গত ৩০ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে জমা করা হয়। ২৪ জুন বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে মাস্টাররোলের সঙ্গে সমন্বয় করে বিগত ৩০ অক্টোবর ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। কাজ না করেও বিল উত্তোলন করে প্রায় ৪ মাস টাকা সাময়িক আত্মসাৎ করা হয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।  

মামলায় বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দে বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ নম্বর প্রকল্প পাকুরতিয়া পান্না শেখের বাড়ি থেকে ছোট ডুমুরিয়া দেবেন মণ্ডলের বাড়ির কাছে এইচবিবি রোড পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং করণ কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। গত বছরের ০৩ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ২৫০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টাররোল সম্পন্ন করে ১ম বিল বাবদ ২৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও চূড়ান্ত বিল বাবদ ২৪ জুন ১১ লাখ ৮০ হাজার ৫শ টাকাসহ মোট ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়।

এছাড়া শ্রমিক দিয়ে ওই কাজ ২টি করানো হয়েছে উল্লেখ করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুত করে নথিতে রেখে বিল প্রদান করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পরিবেশের ক্ষতিকারক ড্রেজার দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। কাবিটা নীতিমালায় ড্রেজারের মাধ্যমে কাজ করানোর কোনো বিধান নেই। পরে ড্রেজার দিয়ে কাজ করে রাস্তায় বালু ফেলা হয়েছে। ফলে রাস্তাটি মানুষের চলাচলের উপযোগী হয়নি। গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনে সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তার জন্য এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের আয় বৃদ্ধি, দেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য আনয়ন, দারিদ্র্য মোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি এবং গ্রামীণ এলাকায় শহরের সুবিধা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সামগ্রিকভাবে জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে (কাবিখা-কাবিটা) গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে  প্রকল্প ২টির উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে দুদকের কাছে।

মামলার বাদী মো. আল-আমিন হোসেন বলেন, প্রকল্প ২টি সরেজমিন পরিমাপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেখা গেছে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এটি সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী হয়নি। অর্থাৎ রাস্তায় বালুর পরিমাণ বেশি ও মাটির পরিমাণ অত্যধিক কম। ড্রেজার দিয়ে বালু পরিবহন করায় দূরে থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার খরচ লাগেনি। কিন্তু ওই খাতে বিল বাবদ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।  

অতিরিক্ত লিড, ম্যানুয়েল কম্পেকশন, লেভেলিং, ড্রেসিং, ক্যাম্বারিং, পার্শ্ব ঢাল ঠিককরণ, শক্ত, কাদা, বালু মাটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বাবদ বিল উত্তোলন করা হলেও রাস্তায় ওই কাজসমূহ করার তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বর্ণিত আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুত করেছে। এ মাস্টাররোল দাখিলের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।