ঢাকা, শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রীর ছেলেকে বিএনপি নেতাদের সুপারিশে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রীর ছেলেকে বিএনপি নেতাদের সুপারিশে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ শাকিল ও ওসি কামাল হোসেন

পটুয়াখালী: ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ অভিযানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রীর ছেলেকে আটকের পর বিএনপি নেতাদের সুপারিশে মুচলেকা ও টাকার বিনিময়ে থানা হেফাজত থেকে ১০ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আটক শাকিল হাওলাদারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় আমরা শাকিলকে থানায় নিয়ে এসেছিলাম। তার (শাকিল) নামে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি নেতারাও তাকে ভালো বলে সুপারিশ করেছেন। মামলা না থাকায় মুচলেকা নিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে শাকিলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান ওসি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও বাংলাদেশি সাংবাদিক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন অভিযোগ তুলে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি পটুয়াখালীর বাউফল থানার এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।  
মঙ্গলবার রাতে ইলিয়াস হোসেন ফেসবুকে লেখেন, ‘পটুয়াখালীর বাউফল থানার ওসি ২ লাখ ও এসপি ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে কালাইয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি রেশমার ছেলে ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি শাকিলকে গ্রেফতারের ১০ ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে!’

স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, ‘ওসি কামাল হোসেন গেল ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ’ 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা খায়রুন নাহার রেশমার (৫০) ছেলে শাকিল হাওলাদার (৩০)। শাকিলের বাবার নাম বাবুল হাওলাদার। মা রেশমা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যও ছিলেন। শাকিলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।  

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শাকিলের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক সময় অভিযোগ করেও প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি এক প্রতিবেশীর জমির বীজ ধান খেয়ে ফেলে শাকিলের গরু। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় শাকিল ধারালো অস্ত্র নিয়ে অভিযোগকারীর ওপর হামলা চালায়, ভাঙচুর ও মারধর করে প্রতিবেশীদের।

স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহজাহান হাওলাদার জানান, শাকিলের পরিবার আওয়ামী লীগ করলেও তিনি রাজনীতি করেন না। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে নিরপরাধ কাউকে শাস্তি থেকে রক্ষার জন্য থানায় গিয়েছিলাম। ’ তবে থানায় যাওয়ার আগে শাকিলের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যুবলীগ সন্দেহে আটক হলেও আমরা নিশ্চিত হয়েছি তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতেন না। ’

একই এলাকার শৌলা গ্রামের রশিদ হাওলাদারের ছেলে মনিরুল ইসলামকে মারধর ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সোমবার বাউফল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, তারা প্রথমে লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ জানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু পরে শুনি শাকিলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

বাউফল থানার ওসি কামাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, শাকিলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা না থাকায় এবং স্থানীয় নেতাদের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়েছে। আমরা প্রথমে তাকে ডেভিল হান্ট অভিযানে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করলেও, পরবর্তী বিএনপি নেতাদের সুপারিশের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঘুষের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগকারী সরাসরি মামলা রেকর্ডের অনুরোধ করেনি। স্থানীয়ভাবে মীমাংসার প্রস্তাব এলে আমরা তা বিবেচনায় নিই।  

তিনি আরও বলেন, আমি এর আগে কখনও থানায় চাকরি করিনি। পটুয়াখালী আদালতে কর্মরত ছিলাম। দেশের পট পরিবর্তনের পর আমি বাউফল থানায় যোগদান করেছি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।