ফেনী: ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই কদর বাড়ে বায়ান্নর ভাষাশহীদ আবদুস সালামের নিজ গ্রাম সালাম নগর ও স্মৃতি জাদুঘরের। দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা সালামের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম ও স্মৃতি জাদুঘর দেখতে এ সময় ভিড় জমান।
এছাড়া বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে সালামের গ্রাম ও স্মৃতি জাদুঘর। গত বছরের জুলাই ও আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় স্মৃতি জাদুঘরটি ডুবে গিয়ে বই ও তাকসহ নানা সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, যা আজো মেরামত করা হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, বায়ান্নর ভাষা শহীদ আবদুস সালামের স্মৃতি রক্ষার্থে বিগত ২০০৮ সালের ২৬ মে মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফেনীর আনোয়ারুল ইকবালের প্রচেষ্টায় ভাষা শহীদ সালামের স্মৃতি রক্ষার্থে তার নিজ গ্রাম ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের সালাম নগরে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাষা শহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। যা ছিল এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর দেখতে নানা প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসতেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় নানা অব্যবস্থাপনায় গ্রন্থাগারটির আজ ভঙ্গুর দশা। নেই আগের মতো পাঠক ও দর্শনার্থী।
ফেনী জেলা পরিষদ থেকে মাস্টার রোলে একজন লাইব্রেরিয়ান ও কেয়ারটেকার দায়িত্ব পালন করছেন। তারাও পাঠক ও দর্শনার্থী না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্মৃতি জাদুঘরের লাইব্রেরিয়ান লুৎফুর রহমান বাবলু জানান, বন্যার সময় বই ও তাক ডুবে গেলে পরবর্তীতে রৌদে শুকিয়ে বই কিছুটা পাঠযোগ্য করা গেলেও তাক নষ্ট হওয়ায় বইগুলো টেবিলের ওপর বিছিয়ে রাখতে হয়েছে।
পাঠক না থাকায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, পাঠকরা আসুক, তাদের কোন বই পছন্দ তারা বলুক আমরা সেভাবে বইয়ের ব্যবস্থা করবো।
স্মৃতি জাদুঘরের কেয়ারটেকার শেখ ফরিদ জানান, জাদুঘরটিতে লাইটিং না থাকায় সন্ধ্যার সময় দর্শনার্থীরা আসতে পারে না। এছাড়া আসার রাস্তারটির ভঙ্গুর দশায় লোকজন আসতে অনীহা প্রকাশ করে।
স্থানীয় সমাজসেবক হারিছ আহমদ পেয়ার জানান, নানা সমস্যায় জর্জরিত সালাম নগরের রাস্তাগুলো চলাচলের উপযুক্ত করা দরকার। সালামের ভাই আবদুল করিম অসুস্থ তার সুচিকিৎসা দরকার। সালাম পরিবার থেকে একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য বহুবার আশ্বাস দিলেও কেউ তা বাস্তবায়ন করেনি। তিনি সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
সালামের ভাই আবদুল করিম জানান, আমি বর্তমানে অসুস্থ। সালাম পরিবার থেকে আমি আমার মেয়ে খাদিজাকে একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউ তা বাস্তবায়ন করেনি।
কিছুদিন গ্রন্থাগারটিতে লাইব্রেরিয়ান হিসাবে চাকরির করলেও সেখান থেকে তাকে চক্রান্ত করে বিতাড়িত করা হয়েছে। সালাম নগর ও স্মৃতি জাদুঘর রক্ষা এবং গণমুখী করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম জানান, আমি সরেজমিন ঘুরে সালাম নগরের বিস্তারিত অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো।
স্থানীয়দের দাবি, সালাম নগর হয়ে উঠুক পাঠক দর্শনার্থীতে ভরপুর। স্মৃতি জাদুঘরটি যাতে পাঠকদের টানে এ জন্য লাইটিং, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তা মেরামত, নিয়মিত সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, গ্রন্থাগারটিতে নিয়মিত পত্রিকা রাখা এবং ভালো ভালো চিত্তাকর্ষণ বইয়ের ব্যবস্থা করা গেলে সালাম নগর ও স্মৃতি জাদুঘরটি প্রাণ ফিরে পাবে। এ জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
এসএইচডি/আরআইএস