ঢাকা: কারাগারে বন্দিদের বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কারা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেছেন, ‘কথা উঠেছে বেশকিছু বিশেষ বন্দি তারা বাসার খাবার খাচ্ছেন, রাজার হালে আছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, বাসার খাবার কেউ খেতে পারছেন না, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।
সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকার বকশীবাজারে কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন এসব কথা বলেন।
বিশেষ বন্দিদের মোবাইলফোন ব্যবহার করতে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বলেন বিশেষ বন্দিরা কারাগারে মোবাইলফোনে কথা বলতে পারছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, কয়েকটা কারাগার যেগুলো আমি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রেখেছি, ওখানে তারা কোনোভাবেই মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না। অন্য জায়গায় করছেন কি না, কারণ তারা সবসময় আমাদের কাছে থাকে না। অনেক সময় তারা রিমান্ডে যান, অনেক সময় আদালতে যান। আমি শতভাগ কারাগারের ভেতরে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি। ’
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, পদোন্নতির জট খোলাসহ অভ্যন্তরীণ নানা ‘সংস্কার’ সত্ত্বেও বিগত ১৫ বছরের কিছু ‘সুবিধাভোগী অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী’ কারাগার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি বিনষ্টের পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, কারাগারকে মাদক এবং মোবাইলফোন মুক্ত করার জন্য গত ৩ মাসে শুধু কেরাণীগঞ্জ কারাগারেই ২৭৫টি ঝটিকা তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছোট বাটন ফোন এবং মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
তার ভাষ্য, ‘১৫-১৬ বছরের অনিয়ম দুর্নীতিতে অভ্যস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়, কিন্তু তা চলমান রয়েছে। ’
৫ আগস্টের পর জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া পলাতকদের মধ্যে এখনও ৭০০ জন পলাতক জানিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো ৭০০ বন্দি পালাতক আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি। এছাড়া, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ও জঙ্গি ৭০ জন পলাতকের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ৬৯ জন এখনও পলাতক আছে। ’
সৈয়দ মোতাহের হোসেন জানান, সারা দেশের কারাগারে ৪২ হাজার ৮৭৭ জন বন্দির ধারণক্ষমতা আছে। আজকে পর্যন্ত বন্দি আছে ৭০ হাজার ৬৫ জন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির বন্দি আছে ১৫১ জন, যারা ডিভিশনপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আছেন ৩০ জন, সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৩৮ জন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ৭০ জন এবং অন্যান্য আছেন ১৩ জন। এর বাইরে একটু বিশেষ বন্দি সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সংসদ সদস্য সরকারি কর্মকর্তা এমন ২৪ জন আছেন, যারা ডিভিশন পাননি বিভিন্ন কারণে। ’
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়াতে ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু করা হয়েছে এবং কেরাণীগঞ্জে আরেকটি বিশেষ কারাগার চালুর উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া রংপুর, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি পুরোনো কারাগার সম্প্রসারণের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দিদের নিরাপদ উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ’
আরও পড়ুন>>কারাগারের ১২ জনকে চাকরিচ্যুত, ৮২৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বাংলাদেশ সময়: ০২৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৫
এজেডএস/এসএএইচ