কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার তিস্তার চরের ছবিলা বেগম। স্বামী পরিত্যক্তা এ নারী ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন।
শুধু ছবিলা বেগম নয়, অধিকাংশ চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে ইফতারের সামগ্রী হচ্ছে এসব খাদ্য। মাঝেমধ্যে ভাগ্যে তাও জোটে না। নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত এসব মানুষ কোনো একটি চরে স্বপ্ন নিয়ে বসতি গড়লেও ফের নদী ভাঙনে তা ছিন্ন হয়ে যায়। দুবেলা-দুমুঠো খাদ্যের সংস্থানে দিনরাত পরিশ্রম করা এসব মানুষের জীবনে ইফতারিটাই বিলাসিতা। এসব পরিবারে রমজানের বিকেলেও থাকে না রান্নার দৌড়ঝাঁপ। ইফতার কিংবা সেহেরিতে বিশেষ কোনো আয়োজন করার সৌভাগ্য হয় না তাদের।
শহুরেদের মতো বাহারি আয়োজন তো দূরের কথা নানাবিধ সংকটে থাকা কুড়িগ্রামের চরের মানুষদের ইফতার হয় চালভাজা, মুড়ি দিয়ে। এই জেলায় তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদনদী আছে। এসব নদীর অববাহিকায় ৪ শতাংশের বেশি চরাঞ্চল রয়েছে। জেলায় বসবাসকারী ২৪ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৮ লাখ মানুষ এই চরাঞ্চলে বসবাস করেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে নানাবিধ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা।
ছবিলা বেগম বাংলা নিউজকে বলেন , ‘মাইনশের বাড়িতে কামলা দিয়ে খাই। কখনো জোগাড় করতে পারলে খাই, না পারলে না খাই। স্বামী নাই, ভাইয়ের বাড়িতে থাকি। একটা মেয়ে আছে তাকে বিয়ে দিয়েছি। কখনও কখনও এক পোয়া নুন আনার টাকা থাকে না আবার ইফতারি!
একই এলাকার সাহিনা বেগম বলেন, বাদাম ও চালের খুদ গুড়া করে রেখেছি। সেগুলো দিয়েই ইফতারি করি। গরিবের সংসার, বারে বারে চর ভাঙে। আমাদের বেঁচে থাকাটাই সংগ্রামের।
এন্তাজ আলি বলেন, আমরা ইফতারি করি পানি দিয়ে। তারপর ডাল-ভাত যা পাই তাই খাই। ছেলেমেয়েরা মাঝে মধ্যে বায়না ধরে। তাদের বুঝ দিয়ে রাখি। কিছু তো আর করার নাই।
রাজারহাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. আল ইমরান বলেন, বর্তমানে জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসন চরের মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তারা অনেক পিছিয়ে আছে। তাদের খাদ্য তালিকার অনেক সুষম খাবার তারা পায় না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি যেসব সুযোগ আছে, যেমন জিআর বা অন্যান্য খাদ্যশস্য বা সময়-সময় যেসব সুযোগ আছে আমরা চরের মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৫
এসএএইচ