ঢাকা, শুক্রবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১, ২১ মার্চ ২০২৫, ২০ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নদীতে বাঁধ দিয়ে মাটি লুট, হুমকিতে জীব-বৈচিত্র্য

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নদীতে বাঁধ দিয়ে মাটি লুট, হুমকিতে জীব-বৈচিত্র্য নদীতে বাঁধ দিয়ে মাটি লুট চলছে। ব্যাহত হচ্ছে পানির প্রবাহ। ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তিতাস নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে চলছে নদীগর্ভ থেকে মাটি লুটের মহোৎসব। দীর্ঘদিন ধরে নদীর গতিপথ বন্ধ রেখে বিস্তীর্ণ জায়গা থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে একটি ভূমিদস্যু চক্র।

রাতের আঁধারে মাটি কেটে তা সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে।  

এদিকে নদীর গতিপথ বন্ধ হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে জীব-বৈচিত্র্যসহ নদী সংলগ্ন কৃষি জমি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না ‘মাটিখেকোদের’।  

অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই আখাউড়ার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ ব্রিজ এলাকা থেকে সদর উপজেলার উজানিসার পর্যন্ত নদীর প্রবাহ বন্ধ করে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তবে দেশের পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও বিগত দুই মাস ধরে আবারো শুরু হয়েছে মাটি কাটার ধুম। প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে ভেকু মেশিন দিয়ে নদীগর্ভ ছাড়াও নদীর পাড় ও আশপাশের কৃষি জমিও কেটে নিচ্ছে চক্রটি। এরপর কেটে নেওয়া মাটি ৩০ থেকে ৪০টি ড্রামট্রাকে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র। স্থানীয়দের অভিযোগ চক্রটির দৌরাত্ম্য দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। নদীতে বাঁধ দেওয়ার ফলে পানির চলাচল না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষি জমির চাষাবাদ। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে জীব-বৈচিত্র্য।  

নদীতে বাঁধ দিয়ে গতিপথ ব্যাহত করছেন মাটিখেকোরা।  ছবি: বাংলাদেশ

প্রতিকার চেয়ে গেল ১২ মার্চ আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন জসিম উদ্দিন শিপন নামে এক ব্যক্তি। এতে অভিযোগ আনা হয় উজানিসার গ্রামের আরিফুল, নুরুজ্জামান শিপন ও আলআমিন ভুঁইয়াসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে।  

কৃষি জমিতে থাকা মো. শাহজাহান নামে এক কৃষক বলেন, ‘নদীতে বাঁধ দেওয়া আমার জমিতে পানি দিতে সমস্যা হয়। মাটি কেটে পুকুরের মতো করে ফেলা একটি জায়গা থেকে এর মালিককে বলে পানি নিতে হয়। আমরা চাই বাঁধ খুলে দেওয়া হোক। ’

কেটে নেওয়া হচ্ছে নদী সংলগ্ন কৃষি জমির মাটিও।  ছবি: বাংলানিউজ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কৃষক বলেন, ‘নদীর কিছু অংশ সরকারিভাবে খনন করা হয়েছিল। আরো কিছু অংশ খনন করা বাকি রয়েছে। এখানে বাঁধ দিয়ে নদী ও এর আশেপাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সময়ের প্রেক্ষিতে মাটি কাটার লোকের পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। কিন্তু আমাদের সুবিধা হয়নি। ’

বাংলাদেশ-নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সংগঠন তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক মো. শামীম আহমেদ বলেন, জড়িতদের আইনের আওতায় এনে জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার ও প্রশাসনকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।

অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফুল বলেন, এমন ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত নই। একটি মহল আমাকে সামাজিকভাবে ঘায়েল করতে এই অভিযোগ এনেছে, যার কোনো সত্যতা নেই। সুমন নামের এক স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলম বলেন, অভিযোগ পেয়ে কয়েক দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে নদীতে বাঁধ দেওয়া অংশ উচ্ছেদ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৫
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।