পাথরঘাটা (বরগুনা): ‘ওরে বাবা..ওরা কতো পাষাণ! মাছ লুট কইরাও ক্ষ্যান্ত অয় নাই। মোগো ট্রলারে আইয়া, পিটান আর পিটান শুরু করছে।
সাগর থেকে জলদস্যুদের কবল থেকে ফিরে এসে এফবি তারেক-২ ট্রলারের জেলে আবুল কালাম (৫০) বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। জেলে আবুল কালামের ডান হাত ও মাথায় কোপের আঘাত রয়েছে। তিন ট্রলারে ৬৭ জন জেলে ফিরে আসেন। তাদের সবাই মারধরের শিকার ও বেশ কতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম।
বুধবার (৯ এপ্রিল) গভীর রাতে পাথরঘাটা থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে বড় বাইজদা এলাকায় মাছ ধরা ১০ ট্রলারে এ গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতি হওয়া ট্রলারের মধ্যে পাথরঘাটার মো. সগিরের মালিকানাধীন এফবি তারেক-২ ও এফবি তুফান-২, নুর মোহাম্মদের মালিকানাধীন এফবি রাজু এবং সেলিম চৌধুরীর মালিকানাধীন এফবি মা রয়েছে। অন্য ট্রলারগুলোর নাম জানা যায়নি। ডাকাতি হওয়া ১০টি ট্রলারের অন্তত ৬৭ জেলের মধ্যে অর্ধশত জেলে গুলিবিদ্ধ ও মারধরে আহত হয়েছেন। জেলেদের সবার বাড়ি বরগুনা জেলা ও পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
এফবি তারেক-২ ট্রলারের অপর জেলে ইলিয়াস, রবিউল ইসলাম বলেন, কোনো কিছু বোঝার আগেই আমাদের ট্রলারে ৩০-৩৫ জনের অস্ত্রধারী লোকজন উঠে এলোপাতাড়ি মারধরসহ কোপানো শুরু করে। আমাদের ট্রলারে ১৫ জন জেলেকে আহত করে মাছ, বাজার সব লুট করে নিয়ে আরেকটি ট্রলারে উঠে চলে যায় ডাকাতরা।
তারা আরও বলেন, গুরুতর জখমদের মধ্যে বেল্লাল হোসেন ও জাহিদ নামে দুই জেলের মাথায় কোপ গুরুতর।
এফবি-মা ট্রলারের মাঝি মনির হোসেনের বরাত দিয়ে মালিক সেলিম চৌধুরী বলেন, বুধবার গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ সশস্ত্র হামলা চালায় জলদস্যুরা। এ সময় জেলেরা বাধা দিলে জলদস্যুরা ট্রলারে উঠে মারধর শুরু করে এবং দূর থেকে গুলি ছোড়ে।
তিনি আরও বলেন, নুর মোহাম্মদের মালিকানা এফবি-রাজু ট্রলারের জেলেরা আহত ৬৭ জেলেকে পাথরঘাটায় নিয়ে আসেন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গুরুতর অসুস্থ জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশালে পাঠানো হয়েছে, বাকিদের ভর্তি এবং বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ্জামান খান বলেন, আহতদের দ্রুত পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি মর্মান্তিক।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সিয়াম-উল-হোক বলেন, ডাকাতির ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থল থেকে জেলেদের উদ্ধার করে। পরে আহত জেলেদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. রাফি বলেন, ১৩ জন গুরুতর থাকায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।
** বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত অর্ধশত
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৫
এসআরএস